ভাষা দিবস নিয়ে কিছু কথা

ভাষা দিবস সাধারণত একুশে ফেব্রুয়ারিকে বলা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাতৃভাষাকে আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এটা দেওয়াটা একেবারেই স্বাভাবিক তার কারণ হচ্ছে মাতৃভাষায় আমাদের মনে সকল ভাবকে প্রকাশ করতে সাহায্য করে। আমরা আজকে যে স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি তার প্রথম আন্দোলন শুরু হয় ভাষা নিয়ে এবং মাতৃভাষাকে বাংলা হিসেবে দেখার জন্য মূলত প্রথম আন্দোলন শুরু হয় যে আন্দোলন আস্তে আস্তে স্বাধীনতার আন্দোলন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। আর যেখান থেকে প্রায় 30 লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজকে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে বসবাস করতে পারছি যেটা আমাদের কাছে অনেক বড় ।

আমরা সকলে অবগত আছি ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ছিল বাংলাদেশের মানুষের জন্য মাতৃভাষা দিবস তার কারণ হচ্ছে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য সবথেকে বড় আন্দোলন করা হয়। যখন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে দেশ প্রেমিক সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ রাজপথে নামে তখন পাকিস্তানি সরকারের নির্দেশে পুলিশ বাহিনী তাদের ওপর গুলি বর্ষন করে। এবং সেখানে নাম না জানা বহু মানুষ শহীদ হয়ে যান এবং আরো মানুষ আহত হন। স্বাধীনতা অর্জনের পরে এই একুশে ফেব্রুয়ারিকে আমরা আমাদের মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পৃথিবীর সামনে পরিচয় করিয়ে দেই।

তবে স্বাধীনতার পর পর থেকে এটা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পরিচিত ছিল না। জাতিসংঘের কাছে এর আবেদন তুলে ধরা হয় এবং এই আবেদন তুলে ধরার মাধ্যমে জাতিসংঘ বিভিন্ন পর্যবেক্ষণের ফলে এটা বুঝতে পারে যে মাতৃভাষার জন্য এত বড় আন্দোলন কোন দেশ কখনোই করেনি। মাতৃভাষার জন্য এত বড় আত্মত্যাগ কোন দেশ কখনোই করেনি যার কারণে পুরো দেশের মাতৃভাষার প্রতি সম্মান দেখে জাতিসংঘ একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং সেই পদক্ষেপ হিসেবে তারা বাংলাদেশের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

এই একুশে ফেব্রুয়ারি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অর্থাৎ পৃথিবীর যেকোনো অঞ্চলে মানুষ থাক না কেন তারা তাদের মায়ের ভাষায় কথা বলতে শিখেছে। আর একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটা হচ্ছে তাদের মায়ের ভাষার প্রতি সম্মান দেখানোর একটি বড় দিন যার কারণে এটা আমাদের বাঙালি জাতির জন্য অনেক বড় একটি গৌরবের ব্যাপার। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে ১৭ই নাম ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে জাতিসংঘের এই প্রস্তাব উদঘাটন করা হয় এবং 188 টি দেশ সমর্থক জানালে, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়। সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয় ২০০০ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি থেকে।

ভাষা দিবস কেন পালন করা হয়

একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন রফিক সালাম বরকত আব্দুল জব্বার সহ নাম না জানা বহু মানুষ। ভাষার জন্য এত বড় ত্যাগ কোন জাতি কখনো করেনি আর এই জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত। শহীদরা যে আত্মত্যাগ করেছিল সেই আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজকে আমরা স্বাধীনভাবে আমাদের মাতৃভাষাতে কথা বলতে পারছি যার কারণে তাদেরকে স্মরণ করার জন্যই আমরা এই মাতৃভাষা দিবসটাকে পালন করি। সব থেকে বড় ব্যাপার হচ্ছে এখন বর্তমানে গোটা বিশ্বজুড়ে প্রায় 26.5 কোটি মানুষ মাতৃভাষাতে কথা বলে আর সেটা হচ্ছে বাংলা। আরে বাংলা ভাষাকে স্মরণ রাখতে এবং পৃথিবীর সামনে শহীদদের স্মরণ করতে তাদের সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়ার জন্যই ভাষা দিবস আমাদের পালন করতে হবে।

কত সাল থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হয়

আমাদের দেশের শহীদরা মাতৃভাষার জন্য যে বড় ত্যাগ স্বীকার করেছে কখনো কোন দেশের শহীদরা সেটা করতে পারেনি। যার কারণে এটা ছিল বিশ্বের কাছে অবাক করা একটি ঘটনা এবং মাতৃভাষার জন্য এত বড় ত্যাগ কেউ কখনো চিন্তাও করতে পারেনি। স্বাধীন হওয়ার পর থেকে মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আমরা একুশে ফেব্রুয়ারিকে পালন করে আসছি কিন্তু এটা এত বড় ত্যাগ যেটা বিশ্বে কখনোই কেউ করেনি যার কারণে 1999 সালে জাতিসংঘ এটাকে স্বীকৃতি দেয় এবং ২০০০ সালে প্রথম ২০২১ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি এটাকে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে।

Leave a Comment