দুর্নীতি এর প্রকৃতি:- দুর্নীতি কথাটি যদি সহজ ভাবে বলা হয় তাহলে সেটা হবে ক্ষমতার অপব্যবহার। যখন কোন ক্ষমতাসীন গ্রুপ বা কোন ব্যক্তি প্রধানের দ্বারা কোন অপকর্ম ঘটিত হয় তখন সেটা দুর্নীতি এর অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ করে সরকারি আমলেদের মধ্যে দুর্নীতির এই ক্ষতিকারক প্রভাব টা খুব বেশি লক্ষ্য করা যায়। দুর্নীতি হলো এমন একটি খারাপ অবস্থা যেখানে একটি দেশ আস্তে আস্তে অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়ে। দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষের ক্ষমতা এবং অধিকার এর অপব্যবহার করা হয়। দেশের নাগরিক ন্যায্য অধিকার অর্থাৎ মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত হয়।যোগ্য প্রার্থী তার যোগ্য অধিকার হতে বঞ্চিত হয়। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন স্থাপন করা হলেও একটি যথার্থ কার্যকর করার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গুরুতর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
দুর্নীতির উৎস সমূহ
বিচার বিভাগে দুর্নীতি:- বাংলাদেশ তথা যে কোন দেশের সর্বোচ্চ আইন সভা হচ্ছে বিচার বিভাগ। এটি এমন একটি কার্যালয়ে যেখানে একটি দেশ পরিচালনার অর্ধেক ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়। এখানে বিভিন্ন আমলাতন্ত্রের স্বার্থপরতা এবং দুর্নীতিগ্রস্ত মনোভাব এর যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে। এর জন্য দেশে পর্যাপ্ত বিচারের অভাব রয়েছে এবং দেশে অবৈধ কার্যক্রমের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
আইন বিভাগে দুর্নীতি:-একটি দেশ পরিচালনা এবং একটি দেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে আইন বিভাগের ভূমিকা অতুলনীয়। এখন যদি আইন বিভাগে কর্মরত বড় বড় ব্যক্তিগণ দুর্নীতির আশ্রয় নেয় তাহলে একটি দেশের আইন বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এবং এর ফলে দেশের নিম্নস্তরের মানুষজন ভুক্তভোগী হচ্ছে।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে দুর্নীতি:- চিকিৎসা হচ্ছে এমন একটি সেবা যেটা একজন মানুষের একজন নাগরিক হিসেবে মৌলিক অধিকারের আওতাভুক্ত। একটি মানুষের যে পাঁচটি মৌলিক চাহিদা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো চিকিৎসা। কিন্তু চিকিৎসাশাস্ত্র এখন দুর্নীতির কবলে চলে আসায় এটি একটি বড় ব্যবসা কেন্দ্র পরিণত হয়েছে। এখানে চিকিৎসার নামে বড় বড় ব্যবসা করতে দেখা যাচ্ছে। নিরীহ মানুষ ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা সেবা নিতে যায় কিন্তু তারা প্রতিনিয়ত ঢুকে যাচ্ছে। তাই দুর্নীতি মুক্ত চিকিৎসা শাস্ত্র গড়ে তোলাটা একটি দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
চাকরি ক্ষেত্রে দুর্নীতি:- বাংলাদেশের বেকারত্বের বড় একটি সমস্যা হল চাকরি ক্ষেত্রে দুর্নীতি। এর ফলে যোগ্য প্রার্থীগণ তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর ফলে শুধু একজন যোগ্য প্রার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না হচ্ছে সমগ্র দেশ। কারণ একজন চাকরি প্রার্থী যদি তার মেধা দিয়ে চাকরি অর্জন না করে তাহলে কর্মক্ষেত্রে তার ফল ভোগ করবে একটি দেশ। বাংলাদেশের বেকারত্ব দিন দিন বেড়ে চলেছে এই দুর্নীতির ফলে। এজন্য এই অধিদপ্তরে দুর্নীতির প্রতিকার করাটা খুবই বেশি দরকার।
দুর্নীতি এর সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে প্রকাশ করা যায়। তবে মূলত দুর্নীতি বলতে আমরা বুঝি যে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং গণতান্ত্রিক বিষয়ে সময়তে স্বার্থপরতার পরিচয়।
দুর্নীতির প্রামাণ্য সংজ্ঞা
দুর্নীতি দার্শনিক, ধর্মতাত্ত্বিক, নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোন আদর্শের নৈতিক বা আধ্যাত্মিক অসাধুতা বা বিচ্যুতিকে নির্দেশ করে। বৃহৎ পরিসরে ঘুষ প্রদান , সম্পত্তির আত্মসাৎ এবং সরকারি ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করাও দুর্নীতির অন্তর্ভুক্ত। একটি দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানসমূহ অর্থাৎ রাজ্য পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গগণ যদি দুর্নীতির দ্বারা লিপ্ত হয় তাহলে একটি দেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সার্বভৌমত্ব নামক শব্দটি হারায়।
গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে দুর্নীতিগ্রস্ত অধিদপ্তর গুলো যথাযথ ভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। যদি সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি দ্বারা আবদ্ধ হয়ে যায় তাহলে একটি দেশ তার স্বাধীনতা হতে বঞ্চিত হবে। দেশের নাগরিকরা প্রতিনিয়ত ভুক্তভোগী এই দুর্নীতির ফলে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন স্থাপন করা হয়েছে, কিন্তু এই কমিশন পেয়ে যাতে যথাযথভাবে কার্যরত থাকে এর জন্য কঠোর নজর দেওয়া প্রয়োজন।বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক যথেষ্ট গুরুতর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে দুর্নীতি দমনের জন্য।
দেশের প্রধান তিনটি বিভাগ, শাসন বিভাগ ,আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। এই তিনটি বিভাগ যাতে দুর্নীতি থেকে মুক্ত থাকে এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতি আবশ্যক। একটি দেশের সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতা রক্ষার জন্য দেশটিকে অবশ্যই দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে।