ভাষা আন্দোলনের কারণ ও ফলাফল

বাঙালি জাতির সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন হচ্ছে ভাষা আন্দোলন। আন্দোলনের মাধ্যমে মূলত আমরা সর্বপ্রথম স্বাধীনতা ডাক দিয়েছিলাম এবং ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা পুরো জাতিকে এটা বোঝাতে পেরেছিলাম যে নিজস্ব জিনিসের মজাই আলাদা। আমাদের যে মাতৃভাষা বাংলা সেটা আস্তে আস্তে অন্য এক জাতির হারিয়ে যেতে চলেছিল কিন্তু বাঙালিরা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং সঠিক সময় সঠিক আন্দোলন শুরু করে। আর সেই আন্দোলনের নামই হচ্ছে ভাষা আন্দোলন যে ভাষা আন্দোলনের কারণে আজকে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি এবং একটি নিজস্ব ভাষা পেয়েছে যেটাকে আমরা মাতৃভাষা বলি।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারি তার কারণ হচ্ছে গোটা বিশ্বে এমন কোন নজির আর পাওয়া যায়নি যেখানে মাতৃভাষার জন্য এত মানুষ শহীদ হয়েছে এবং এত বড় আন্দোলন হয়েছে। আমরাই পৃথিবীতে একমাত্র জাতি যারা মাতৃভাষার জন্য এত বড় আন্দোলন করেছি এবং মাতৃভাষাকে এতটা ভালবাসি। এই মাতৃভাষার আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ এবং মাতৃভাষার আন্দোলনের ফলে আমরা যে ফলাফল পেয়েছি সেটা জানাটা অত্যন্ত জরুরী সাধারণ মানুষের। যারা একেবারে নতুন এবং যারা একেবারে যুবক তারা হয়তো মাতৃভাষার গল্প শুনেছে তাই তাদের কাছে প্রতিনিয়তই মাতৃভাষার গুরুত্ব এবং মাতৃভাষার আন্দোলন সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য দেওয়া আমাদের কর্তব্য।

ভাষা আন্দোলনের কারণ

ভাষা আন্দোলনের সময়কাল যদি আমরা দেখি তাহলে ভাষা আন্দোলনের সময়কার ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল বলা যেতে পারে। এই সময়ের মধ্যে মূলত বাঙালি জাতি আসল ভাষা আন্দোলনের কাজগুলো করে থাকে এবং এখানে প্রচুর পরিমাণে আন্দোলন হয় এবং ঘন ঘন এই আন্দোলন বাঙালি জাতির আজকের ফলাফল এনে দিয়েছিল । কিছু কথা না বললেই নয় যেখানে পূর্ব বাংলায় বর্তমান যেটা বাংলাদেশ সেখানে এই আন্দোলন ঘন ঘন ঘটার কারণে যারা পশ্চিমবাংলা অর্থাৎ বর্তমান পাকিস্তান তারা একটু বিপদে পড়ে গিয়েছিল। এটা ছিল সংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন যেখানে মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্বে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে একটি গণ দাবি করা হয় এবং তার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ঘন ঘন আন্দোলন করা হয়।

ভাষা আন্দোলনের মূল কারণ হচ্ছে রাষ্ট্রভাষাকে তারা উর্দু ভাষা হিসেবে ঘোষণা করতে চাওয়া মূলত এটা বাঙালি মানুষেরা কখনোই গ্রহণ করতে পারবে না যে অন্যের ভাষাতে যারা কথা বলবে। এছাড়া সকল অফিস আদালতের ভাষা হবে উর্দু ভাষা এই ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি জাতির প্রত্যেকটি মানুষ বাংলা ভাষাকে তাদের মাতৃভাষা এবং রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এই আন্দোলন শুরু করে।

আন্দোলন অনেক বেশি হয় ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি যেখানে বহু মানুষ শহীদ হয়েছেন। এই দিনটাকেই পৃথিবীর ইতিহাসে সবথেকে বড় দিন মাতৃভাষার জন্য ধরা হয়ে থাকে। আর তাইতো এই ভাষার আন্দোলনের দিনটিতে শহীদ হওয়া প্রত্যেকটি শহীদের কথা মনে করে এই দিনটাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে জাতিসংঘ।

ভাষা আন্দোলনের ফলাফল

ফলাফল সম্পর্কে বলতে গেলে ফলাফলটা আপনি নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন। আপনি যখন জন্মগ্রহণ করেন জন্মগ্রহণ করার পরে আপনার মায়ের মুখে শুনতে পাওয়া সেই ভাষাটাই আপনি সারা জীবন স্বাধীনভাবে বলতে পারছেন। অফিস আদালত থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জায়গাতে আপনি ইচ্ছেমতো কথা বলতে পারছেন নিজের মাতৃভাষাতে এখানে নেই কোন বাধ্যবাধকতা নেই কোন লজ্জা। এখানে জোর করে কেউ আপনাকে বলছে না অন্যের ভাষাতে কথা বলতে আবার আপনি কোন জায়গাতেই বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন না।

আপনার মায়ের ভাষাতে আপনি কথা বলতে পারছেন আপনার মায়ের ভাষাতে অন্যের সঙ্গে মতবিনিময় করতে পারছেন যা অন্যের কথা বুঝতে আপনাকে সাহায্য করছে। আর এই ভাষার প্রভাব পুরো জাতিকে একটি সুতোয় গেঁথে ফেলে যা বাংলাদেশের উন্নয়নে অনেক বড় একটি অবদান রাখতে পারে।

 

 

 

Leave a Comment