কৃমি এমন একটি অমেরুদন্ডী প্রাণী যেটি মানব শরীরে বসবাস করে। বিশেষ করে মানবদেহের পাকস্থলীতে বসবাস করে এই অমেরুদন্ডী প্রাণীটি। অসুস্থকর কর খাবার দাবার এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এই রোগটির জন্য দায়ী। বিশেষ করে বাচ্চাদের পেটে কৃমি বেশি হয়ে থাকে। শরীরে কৃমি হলে বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। বাচ্চাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে।
আজকে আমরা আপনাদের জানাবো যে কিভাবে কৃমি থেকে বাচার সম্ভব। কৃমি রোগের জন্য কোন ঔষধটি সেবন করা উচিত এবং কোন ঔষধের দ্বারা সহজেই কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কিন্তু কৃমি থেকে মুক্তি পেতে কার্যকরী কিছু ঔষধের নাম আপনারা যদি জানতে চান তাহলে আপনারা আমাদের এই আর্টিকেলে সেগুলো জানতে পারবেন।
কৃমি মানবদেহে বসবাস করে এবং মানব দেহ থেকে প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ শোষণ করার মাধ্যমে বংশবিস্তার করেন। এর ফলে মানব দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ এর অভাব থেকেই যায়। মারাত্মক পর্যায়ে ধারণ করলে বড় ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। শিশু দেহে অতিরিক্ত কৃমি বংশবিস্তার করলে শিশু মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই আমাদের যথাযথ সময়ে কৃমি রোগের প্রতিকার করতে হবে। কৃমি রোগের সাধারণত মূল লক্ষণ হল পেট ব্যথা। দুর্বলতা বোধ করা এবং খাবারে অরুচি এগুলোই কৃমি হওয়ার সাধারণ লক্ষণ।
মেবেন্ডাজল কৃমি চিকিত্সার জন্য এক ধরনের ওষুধ। এটি প্রধানত অন্ত্রের সংক্রমণ যেমন থ্রেডওয়ার্ম (কখনও কখনও পিনওয়ার্ম হিসাবে পরিচিত) এবং অন্যান্য কম সাধারণ কৃমি সংক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয় (হুইপওয়ার্ম, রাউন্ডওয়ার্ম এবং হুকওয়ার্ম)। এটি বেঁচে থাকার জন্য চিনি (গ্লুকোজ) ব্যবহার করা থেকে কৃমি বন্ধ করে কাজ করে।
এক ধরনের পোকা পেটের মধ্যে বসবাস করে যেটা ছোট আকার থেকে বড় আকার ধারণ করে এবং বংশবিস্তার করে আকারে বৃদ্ধি পায়। আমরা প্রতিদিন যে খাদ্য গ্রহণ করি সেই খাদ্য থেকে গ্লুকোজ শোষণ করে এই ক্রিমগুলো বেঁচে থাকে এবং বংশবিস্তার করে। এর ফলে আক্রান্ত শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে যায় এবং সব সময় দুর্বলতা বোধ করে। এর জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কৃমি ধ্বংস করতে হবে। কৃমি দূর করার ঔষধ সেবন করার মাধ্যমে এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করার মাধ্যমে আপনি কিন্তু কৃমি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
তিন মাস পরপর বাড়ির সব সদস্যকে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো উচিত। কারণ এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। এক শরীর থেকে অনেক শরীরে পার হতে পারে এজন্য যখনই কৃমির ঔষধ খাওয়া হয় তখন পরিবারের সবার একসঙ্গে খাওয়া উচিত। তিন মাস পরপর নিয়মিত কৃমি রোগের ওষুধ খেতে হবে। কৃমি থেকে বাঁচতে শুধু ঔষধ খেলে হবে না সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসম্মত বজায় রাখতে হবে। যেগুলো কারনে কৃমি ছড়ায় সেগুলো হল অপরিষ্কার খাবার দাবার এবং অপরিষ্কার বাসস্থানের জন্য।
১. পচা বাঁশি খাবার খাওয়া যাবে না।
২. মলত্যাগের পর, খাবার তৈরি বা পরিবেশনের আগে এবং খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
৩. কাঁচা ফলমূল ও সবজি খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে।
৪. শৌচাগার ও বাড়িঘর পরিষ্কার রাখুন।
৫. খালি পায়ে হাঁটবেন না।
৬. বাড়ির সবার নখ কেটে ছোট রাখতে হবে।
৭. শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হলে তা রোধ করতে হবে।
কৃমির ঔষধ খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। এখন বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার করতে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কৃমির ঔষধ খাওয়ানো হয়। বিশেষ করে প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চাদের নিয়মিত কৃমির ঔষধ খাওয়ানো হয়।
অ্যালবেনডাজল, মেবেনডাজল আমাদের দেশে কৃমির ওষুধ হিসেবে পাওয়া যায়। এসব ওষুধ খালি পেটে খাওয়ানো ভালো, তবে প্রয়োজনে ভরা পেটে খাওয়া যেতে পারে।
শিশুর মলদ্বার চুলকালে মলদ্বার পরিষ্কার করে ভ্যাসলিন লাগিয়ে রাখতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে প্যান্ট ও জামা পরিবর্তন করে দিতে হবে। আগেকার দিনে কৃমি হলে এর কোন ঔষধ ছিল না তাই কৃমির ভয়াবহ রূপ নিত। এর কারণে বহু মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে। কিন্তু এখন নিয়মিত অর্থাৎ তিন মাস পর পর সবাইকেই কৃমির ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তাই এই রোগ থেকে অনেকাংশে মুক্তি পাওয়া গেছে।