সাধারণ অর্থে আমরা থানা বলতে আমাদের দেশের বিভিন্ন যে পুলিশ স্টেশন রয়েছে সেই পুলিশ স্টেশন কেই বোঝানো হয়। অর্থাৎ সরকারের যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য প্রশাসনিক যে জায়গা গুলো এবং সেই তৃণমূলের জায়গা গুলোর একটি নাম হচ্ছে থানা। থানা পর্যায়ে পুলিশ স্টেশন থাকে এবং এই পুলিশ স্টেশন থেকে সেই থানা এরিয়ার সব ধরনের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য তারা বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য এখানে অনেকগুলো পুলিশ বা পুলিশ সদস্য থেকে থাকে। একটা থানায় একজন কর্মকর্তা এবং বেশ কিছু এসআই এএসআই এবং একেবারে সর্বশেষ পর্যায়ে অনেকগুলো কনস্টেবল থেকে থাকে।
এরা সবাই মিলে একটি প্রশাসনিক এলাকার অর্থাৎ স্থানীয় সরকারের যে প্রশাসনিক এলাকা রয়েছে সেই প্রশাসনিক এলাকা গুলোকে দেখভাল করে থাকে। অর্থাৎ থানা সবসময়ই শুধু মাত্র আইনশৃঙ্খলার বিষয় সম্যক্ষে প্রাধান্য দিয়ে তারা তাদের কাজকর্ম পরিচালনা করে থাকে। তাই বলা যায় যে থানা একটি পুলিশি প্রশাসনিক ইউনিট। বাংলাদেশের সামরিক শাসক হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ কর্তৃক অনেক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে এটি আসলে একটি পুলিশি ব্যবস্থাপনার ইউনিট হিসেবেই থানাকে গণ্য করা হয়ে থাকে।
উপজেলা
উপজেলা শব্দটির অর্থ হল জেলার সাদৃশ। তাই গ্রামের মানুষকে বিভিন্ন কাজকর্মে জেলাতে ছুটে যেতে না হয় সেই কারণে সামরিক শাসক হোসেন মোঃ এরশাদ উপজেলা পরিষদের প্রবর্তন করেন। অর্থাৎ হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ জনগণের সুবিধার জন্য এবং সরকারের প্রশাসনিক ক্ষুদ্র অংশকে একেবারে গণমানুষের সামনে গণমানুষের দুয়ারে দাঁড় করানোর জন্য উপজেলা বিষয়টি উপস্থাপন করেন। গ্রামের মানুষকে যেকোনো প্রশাসনিক কাজ করার জন্য দৌড়াইতে দৌড়াইতে আর জেলা শহরে যেতে না যাওয়া হয় সে কারণেই উপজেলা তৈরি করা হয়। তবে উপজেলা তৈরি করার আরেকটি কারণ হলো প্রশাসনিক অঞ্চলকে ক্ষুদ্র আকারে ভেঙ্গে ভালোভাবে এলাকার উন্নয়ন ঘটানো।
তাই বাংলাদেশের সামরিক শাসক স্বৈরাচারী শাসক হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হলেও জনগণের সুবিধার কারণে এই উপজেলা পরিষদ এখনো কোন সরকার বিলুপ্ত ঘোষণা করেনি। তাই একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের সরকারের অংশ হলো উপজেলা পরিষদ। এই উপজেলা পরিষদে সরকারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে অর্থাৎ বিভিন্ন জেলাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করে সেই অঞ্চলগুলোর সকল প্রশাসনিক কাজকর্মগুলো উপজেলা গুলোতে দেখা হয়। অর্থাৎ উপজেলা পরিষদ হলো বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার একটি একক অংশ। একটি উপজেলার প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত স্থানীয় জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। এবং সরকারের আমলাতন্ত্রের প্রথম পর্যায়ের কর্মকর্তা ইউ অনু সাহেব বা থানা নির্বাহী অফিসার। এছাড়াও রয়েছে ভূমি সংক্রান্ত বা ভূমি মন্ত্রণালয়ের ক্ষুদ্রতম প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার ভূমি কার্যালয়।
থানা ও উপজেলার মধ্যে পার্থক্য
তাই বলা যায় যে থানা ও উপজেলার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। থানা বলতে সাধারণত বোঝায় যে দেশের ক্ষুদ্রতম পুলিশ ইউনিটের বা পুলিশ কার্যালয় এবং উপজেলা বলতে বোঝায় যে সরকারের প্রশাসনিক পর্যায়ের ক্ষুদ্রস্তরের নাম। তাই থানা এবং উপজেলা যদিও আমরা এক বিষয়ে বলে অনেক সময় গুলিয়ে ফেলি কিন্তু বিষয়গুলো আলাদা। যদিও একটি উপজেলায় একটি থানা থাকে সাধারণত কিন্তু কোথায় কোথায় উপজেলা সীমানার মধ্যে একাধিক পুলিশ ফাঁড়ির ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্তু একটি থানা অঞ্চলের মধ্যে একাধিক উপজেলা রয়েছে এমন আমাদের বাংলাদেশে এখনো নাই। তাই আমরা বলতে পারি যে প্রশাসনিক পর্যায়ের দুইটি আলাদা আলাদা ইউনিট থানা এবং উপজেলা। তবে এই বিষয়গুলির মধ্যে অনেক সময় তালগোল পাকিয়ে ফেলানো হয়েছে সরকারের কাছ থেকেই। কখনো কখনো কোনো সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে উপজেলা পরিষদ তুলে দিয়ে শুধু থানা অঞ্চল ঘোষণা করে এবং পরবর্তীতে আবার কোন সরকার ক্ষমতায় এসে উপজেলা পরিষদ কে পুনর্বহাল করেছেন। তাই আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থানা এবং উপজেলা এক বলে মনে করে থাকি।