মানুষ মরণশীল। অর্থাৎ যে কোন প্রাণী জন্মগ্রহণ করিলে তার মৃত্যুর স্বাদ অবশ্যই উপভোগ করতে হবে। তাই মানুষ যেহেতু জন্ম গ্রহণ করে তাই তাকে অবশ্যই মৃত্যুবরণও করতে হবে। বার্ধক্য জনিত কারণ অথবা বিভিন্ন রোগ শোখে ভোগে মানুষ মারা যেতে পারে। এছাড়াও আততায়ের হাতে খুন হতে পারে অথবা অস্বাভাবিক যে কোন মৃত্যু অর্থাৎ এক্সিডেন্ট ঘটেও মানুষ মারা যেতে পারে। বিভিন্ন কারণে মানুষ মারা যায়। তাই আজকে আমাদের এখন দেখতে হবে যে খন্দকার মোস্তাক কিভাবে মারা গিয়েছিলেন। খন্দকার মোস্ত াক কে ছিলেন সে বিষয়টি আগে আমাদের জেনে নিতে হবে। তবে যাদের জন্ম বা বেড়ে ওঠায় ৭১ পরবর্তী সময়ে তারা অবশ্যই খন্দকার মোস্তাকের কথা জানেন।
খন্দকার মোস্তাক কে ছিলেন
খন্দকার মোস্তাক বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তবে এই ব্যক্তি অনেকটাই বাংলাদেশের মানুষের কাছে বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত আছেন। খন্দকার মোস্তাক আহমেদের জন্ম ১৯১৯ সালে। এবং মৃত্যু হয় পাঁচই মার্চ 1996 সালে। এই ব্যক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন নেতা ছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয় তখন তার ভূমিকা ছিল বিতর্কিত। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের নেতা হওয়া সত্ত্বেও তাকে অদৃশ্য শক্তি রাষ্ট্রপতি হিসেবে রেখে দেয়।
অর্থাৎ ১৫ ই আগস্ট ১৯৭৫ সময় যখন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় তখন তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন অযাচিতভাবে। অর্থাৎ খন্দকার মোস্তাক ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ থেকে ৬ নভেম্বর 1975 পর্যন্ত অঘোষিতভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এবং মনে করা হয় যে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এবং রাষ্ট্রপতি হওয়ার লোভে তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করে গেছেন। আর এই কারণেই খুনি মোস্তাক বা মোস্তাক আহমেদ বাংলাদেশের জনগণের কাছে অনেকটাই বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
রাষ্ট্রপতির পরবর্তী জীবন
খন্দকার মোস্তাক আহমেদ ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তারপর ১৯৭৬ সালে মুস্তাক আহমেদ নতুন একটি রাজনৈতিক দল ডেমোক্র্যাটিক লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। অর্থাৎ তৎকালীন সামরিক সরকার তাকে গ্রেফতার করে কারাগারের নিক্ষেপ করে। তার বিরুদ্ধে আদালত দুইটি অভিযোগ আনে এবং সেই অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়।
জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি আবার সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর দেশ মূলত উল্টো পথে ধাবিত হতে থাকে। এবং সে সময় বন্ধ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কারীদের সহযোগিতা করার জন্য মুস্তাক আহমেদকে বাংলাদেশের জনগণ ঘৃণার চোখে দেখতে থাকে। পরবর্তীতে তিনি বেঁচে থাকলেও তেমন ভাবে আর সমাজে গুরুত্বপূর্ণ কোন পদ পাইনি বা মানুষটাকে তেমন আর পাত্তা দেয়নি বা গুরুত্ব দেয়নি।
মোস্তাকের মৃত্যু
খন্দকার মোস্তাক আহমেদ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দিন থেকে মাত্র ৮৩ দিন রাষ্ট্রপতি পদে বহাল ছিলেন। ৮৩ দিন পরে তারই সেনাপ্রধানের কাছে তিনি গ্রেপ্তার হন। অর্থাৎ সেনাপ্রধানের গ্রেফতার করে এবং ষড়যন্ত্রের কথা বলে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হয়ে থাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে এই পাঁচ বছর খারাপ হকের পর খন্দকার মোস্তাক ছাড়া পেয়ে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি থাকার পর তিনি মানুষের লোকো চক্ষুর অন্তরালে চলে যায় এবং সেখানেই তার মৃত্যুবরণ হয়।
অর্থাৎ এই মীরজাফর বাংলার নব্য মির্জাপুর হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন খন্দকার মোস্তাক আহমেদ। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে থেকেছেন এবং বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে তার খুনিদের তিনি সহায়তা করে সেই শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে। কিন্তু ক্ষমতার লোকে তিনি তাদের সাথে সঙ্গ দিলেও শেষ পর্যন্ত পাপ তাকে ক্ষমা করেনি। তাকে বাংলার প্রতিটি মানুষ চিনে বাংলার মীরজাফর হিসেবে। এবং পরবর্তীতে আসলে তিনি অনাদর অবহেলায় এবং অনুশোচনায় ভূগে মৃত্যুবরণ করেন। তাই খন্দকার মোস্তাক আহমেদের পরবর্তী জীবন খুব সুখের ছিল না বলেই জানা যায়।