যারা কখনো রক্তদান করেননি তারা হয়তো রক্ত দান সম্বন্ধে খুব বেশি কিছু জানেন না। যারা কখনো রক্ত দেননি তাদের কিছু বিষয় সম্বন্ধে জানা খুবই জরুরী কারণ আপনাদের অনেকের ধারণা রক্ত দান করলে হয়তো শরীরের কোন ক্ষতি হতে পারে। আমরা আপনাদের ধারণাটি যে সম্পূর্ণ ভুল তা প্রমাণ করার চেষ্টা করব। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ চাইলেই নিয়মিত রক্তদান করতে পারেন এবং রক্তদান করলে তার শরীরের কোন ধরনের ক্ষতি হয় না সে বিষয়টি নিয়ে আজকের আলোচনা।
যারা রক্ত দিতে ভয় করছেন অথবা আশেপাশের মানুষ আপনাকে রক্তদানে নিরুৎসাহিত করছে তারা এই আর্টিকেলটি পড়ার পর হয়তো রক্ত দেওয়ার জন্য আগ্রহী হবেন। রক্ত দিতে হবে এই ভয়ে শুরুতেই এই পোস্টটি পড়া বন্ধ করে দিবেন না, মনোযোগ সহকারে পুরো পোস্টটি পড়ুন এবং এরপর সিদ্ধান্ত নিন।রক্ত মানবদেহে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যে কিছুক্ষণ শরীরে রক্ত প্রবাহিত না হলেই মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে। যেকোনো দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মানুষের শরীর থেকে প্রচুর রক্তকরণ হতে পারে অথবা পুষ্টিহীনতায় ভোগে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে।
বিভিন্ন অপারেশন করানোর সময় রোগীর শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে যেতে পারে যে ক্ষেত্রে পরবর্তীতে তার শরীরে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়। আপনারা যারা নিয়মিত হসপিটালে যাতায়াত করেন তারা হয়তো রক্ত দেওয়ার দৃশ্যটি দেখেছেন। একবার রক্তের জন্য রোগীর আত্মীয়রা যেভাবে ছোটাছুটি করে তা সত্যিই আমাদের মনকে অনেক ব্যথিত করে। প্রায় প্রতিটি মানুষই জীবনের কোন এক পর্যায়ে এমন বাস্তবতার সম্মুখীন হয়। ঠিক এ কারণেই অনেক শিক্ষার্থী স্বেচ্ছায় রক্তদান করে যেন রোগীরা কখনো রক্তের অভাবে মারা না যায়।
আমাদের আশেপাশেই একশ্রেণীর মানুষ আছে যারা রক্তদান করতে মোটেও আগ্রহী নয়। এরা ভাবে রক্ত দান করলে শরীর থেকে অনেক রক্ত বের হয়ে যায় যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। আপনাদের জানা উচিত এক ব্যাগ রক্তে আসলে কতটুকু রক্ত থাকে। এক ব্যাগ রক্ত দিলে ঠিক কতদিনের মধ্যে আবার আমাদের শরীরে পুনরায় সেই ঘাটতি পূরণ হবে সে বিষয়েও জানা উচিত। যেখানে বিশেষজ্ঞরা মানুষকে রক্ত দিতে উৎসাহিত করেন সেখানে কিছু মাথামোটা মানুষ আছে যারা আপনাকে কোনভাবেই রক্ত দেওয়ার জন্য উৎসাহ দেবে না।
যারা জানেন না এক ব্যাগ রক্তে কতটুকু রক্ত থাকে অথবা এক ব্যাগ রক্তের ওজন কত তাদেরকে জানিয়ে রাখছি এক ব্যাগ রক্তের ওজন হলেও ৪৫০ মিলিগ্রাম। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর চেয়ে একটু কম বেশি হতে পারে তবে কখনোই অনেক বড় পার্থক্য হবে না। ৪৫০ মিলিগ্রাম রক্ত শরীর থেকে বের হয়ে গেলে তিন থেকে চার মাসের মধ্যে পুনরায় এই ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন নিয়মিত রক্তদান করলে বরং শরীর সুস্থই থাকে। মানুষ হয়ে অন্য একজন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেয়ে বড় কাজ আর কিছু আছে বলে মনে হয় না।
রক্তদান সম্বন্ধে যারা কিছুই জানতেন না তারা জেনে নিলেন একবার রক্ত দিলে অথবা এক ব্যাগ রক্ত দিলে কতটুকু ওজনের রক্ত দিতে হয়। রক্ত দেওয়ার আগে অবশ্যই রক্ত দাতার শারীরিক অবস্থা যাচাই-বাছাই করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রক্তদাতার গ্রুপের সাথে রোগীর রক্তের গ্রুপ মিলছে কিনা সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হয়। যারা কখনো রক্ত দেননি তাদের এই বিষয়গুলো নিয়ে বেশ আগ্রহ থাকে কিন্তু বিভিন্ন কারণে তাদের রক্ত দেওয়াটা হয়ে উঠে না।
সঠিক তথ্যগুলো যদি তাদের সামনে উপস্থাপন করা হয় তাহলে হয়তো তারাও রক্ত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে চাইবে। যারা নিয়মিত রক্ত দান করেন তারা চেষ্টা করবেন আপনার আশেপাশের সবাইকে রক্তদানে উৎসাহিত করতে। রক্তদান সম্বন্ধে যেসব ভ্রান্ত ধারণা মানুষের মনে রয়েছে তা দূর করার চেষ্টা করতে হবে, সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে এক ব্যাগ রক্তের ওজন ৪৫০ মিলিগ্রাম।