কোটা হল এমন একটি ক্ষমতা, যার মাধ্যমে কিন্তু স্বল্প মেধা দাঁড়াও অনেক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। যাদের বিভিন্ন ধরনের কোটা আছে তারা মেধা তালিকায় পিছিয়ে থাকলেও তাদের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষা হয়। সারা বাংলাদেশের যুবক যুবতীরা লেখাপড়া শেষ করে নিজের ক্যারিয়ারের জন্য চাকরির যুদ্ধে নিজের সর্বস্ব দিয়ে লড়াই করে। নির্বাচনী পরীক্ষার মাধ্যমে যাদের ফলাফল ভালো তাদের বিভিন্ন ধরনের সরকারি চাকরির নিয়োগ দেওয়া হয়।
কিন্তু এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে যদি কোন শিক্ষার্থীর মুক্তিযোদ্ধার কোটা থাকে তাহলে কম নাম্বার পেয়েও কিন্তু সেই শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ধরনের চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধার কোটা এখন বাংলাদেশে বর্তমানে খুবই বেশি দেখা যাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধার কোটা দ্বারা অনেক মেধাহীন ছাত্র-ছাত্রী বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। চাকরির পরীক্ষা থেকে শুরু করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গুলোতেও কোটা সুযোগ সুবিধা প্রচলন করা হয়েছে। কোটা সুবিধা প্রয়োগ নিতান্তই একটি যুক্তিহীন ব্যবস্থা। সবাই এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেছে।
কোটা সংস্কার এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে মেধা দিয়েও অনেক ছাত্রছাত্রীরা চাকরির সুযোগ পাচ্ছে না কিন্তু কম নাম্বার পেয়েও কোঠার দ্বারা কিন্তু অনেক ছাত্র-ছাত্রী সরকারি চাকরি পেয়ে যাচ্ছে। এটা এক ধরনের দুর্নীতি এবং অবিচার। কোটা সংস্কারের প্রতিকার হওয়া উচিত।এবারের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে একটি ধারণা বিশেষভাবে প্রচারিত হয়েছে যে কোটা পদ্ধতির নিয়োগের ফলে সরকারি চাকরিতে মেধাহীনরা ঢুকে পড়ছে ফলে প্রশাসন মেধাশূন্য হয়ে পড়ছে।
অনেকেই মনে করেন কোটায় দুর্বল প্রশাসন তৈরি হয়েছে এবং এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের উন্নয়ন ভীষণভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। পক্ষান্তরে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভ জমা হচ্ছে। এর ফলে প্রায় সব মহলই এ অন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানায়।এবারের কোটা সংস্কার দাবির অন্যতম লক্ষ্য ছিল বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিলোপ অথবা একেবারেই কমিয়ে আনা। বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটাটি যেহেতু পুরো কোটার একটি বড় অংশ তাই এর মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার তৃতীয় প্রজন্মের অমেধাবী প্রার্থীরা ব্যাপক হারে সরকারি চাকরিতে ঢুকে পড়ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে আসলেই কি কোটা ব্যবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অমেধাবীরা সরকারি চাকরিতে ঢুকে পড়ছে?
এটা সত্যি যে কোটাধারী ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রে সামান্য কিছু বেনিফিটস থাকে কিন্তু তাদের নিজস্ব কিছু জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী অনভিজ্ঞ পার্টিদের কখনোই সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় না।
আসলে কোডটা সংস্কারের বিরুদ্ধে যে ধরনের আন্দোলন তৈরি হয়েছে তার বিরুদ্ধে শান্তনামূলক কিছু বক্তব্য রয়েছে কর্তৃপক্ষের। সেটা হলো কোটা প্রয়োগ করা হয় কিন্তু সব পরীক্ষা যথার্থ নাম্বার পাওয়ার পর সেটা কিছু সংখ্যক কোটা যুক্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য নির্ধারিত থাকে। কিছু পার্সেন্টেজ নির্ধারিত থাকে কোটাধারী শিক্ষার্থীদের জন্য। কিন্তু যারা বিপুল নাম্বারে উত্তীর্ণ হয় এবং মেধাতালিকায় যাদের স্থান প্রথম সারিতে তারা অবশ্যই সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে না।কোটা প্রয়োগ করা হয় সকল রকম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মেধা তালিকার ভিত্তিতে।
পরীক্ষায় কোনো কোটা সিস্টেম নেই। প্রার্থীরা প্রিলিমিনারী, লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী মেধা তালিকা প্রস্তুত করা হয়। দুই/আড়াইলাখ পরীক্ষার্থীর মধ্য থেকে কমবেশি পাঁচ হাজার মেধা তালিকায় স্থান পায়। তারপর সেই তালিকা থেকে ৪৪ শতাংশ মেধা কোটায় নিয়োগ দেয়া হয়। তারপর জেলা কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও অন্যান্য কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ হয়ে থাকে। অনেক সময় এই মেধা তালিকার একদম নীচের দিক থেকে পালি, উর্দু এমনকি অংক শিক্ষকও নিয়োগ দেয়া হয় যদি তালিকার উপরের দিকে শিক্ষক না থাকে।
ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করলে দেখা যায় অনেক শিক্ষার্থীর কম নাম্বার পেয়েও আসন পেয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের কোটা এবং বিভিন্ন কোটাধারী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদাই কিছু আসন বরাদ্দ থাকে। তাদের সেই সংখ্যক আসন নিজেদের মেধা দ্বারা অর্জিত করতে হয়। তবে এটা সঠিক যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তুলনায় তাদের ক্ষেত্রে বেশি নমনীয়তা রয়েছে। কিন্তু তাদের জন্য যে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে এটা সত্যি নয়।