যে সকল কাপল কোর্ট ম্যারেজ করবেন বলে ভাবছেন তারা হয়তো একেবারেই জানেন না যে কোর্ট ম্যারেজ কিভাবে করতে হয়। অনলাইনের যুগে কাউকে কিছু প্রশ্ন না করে আমরা খুব সহজে বেসিক ধারণা বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে গুগল ব্যবহার করি। তাই এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা যখন কোর্ট ম্যারেজ কিভাবে করব তা জানতে পারবেন তখন সেটা আপনাদের এই কাজকে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যাবে। পরিবার মানছে না অথবা অন্যান্য সমস্যা থাকার কারণে যখন আপনারা একে অন্যকে পাওয়ার জন্য কোর্ট ম্যারেজ করার চিন্তা-ভাবনা করবেন তখন নিচের নিয়ম গুলো অনুসরণ করাটা ভালো হবে।
সাধারণত একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে সকলেই উপস্থিত থাকেন এবং খুব আনন্দের সঙ্গে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। বিয়ে মানে সামাজিকভাবে এবং ধর্মীয়ভাবে দুইটি মনের একত্রিত হয়ে যাওয়া এবং দুজন মানুষ একত্রে থাকার অনুমতি পাওয়া। বিয়ে হওয়ার পর সেই মানুষটার সঙ্গে সুখে দুঃখে থাকার পাশাপাশি সন্তান উৎপাদন এবং জীবনের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে ভরসার জায়গা আমাদের তৈরি হয়। তাই আপনারা যখন শিক্ষাজীবনে অথবা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে কাউকে ভালোবেসে ফেলবেন এবং সেই মানুষটাকে পাওয়ার জন্য কোর্ট ম্যারেজ করতে চাইবেন তাদের উদ্দেশ্যেই আমরা এই আলোচনা করতে চলেছি।
সাধারণত আপনি যদি কোর্ট ম্যারেজ করতে চান তাহলে আপনাকে একজন উকিলের শরণাপন্ন হতে হবে এবং তিনি আপনাদের বিয়ের রেজিস্ট্রির কাজটা করে দিতে পারবেন। তবে ধর্মীয় দিক থেকে এ সকল বিষয়ে কিছুটা বাধা নিষেধ রয়েছে। কারণ উকিলের মাধ্যমে আপনি বিয়ের কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারলেও সেই বিয়ে পরিয়ে দেওয়া অথবা মোনাজাত করা এ বিষয়গুলো সহজে সম্পন্ন হয় না। আবার যারা হিন্দু ধর্মালম্বী রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা হয়ে থাকে। অর্থাৎ সামাজিকভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার মতো কাগজে-কলমে লিখে আপনি কোন একজন মানুষকে বিয়ে করতে পারলেও ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তাকে পাওয়ার ক্ষেত্রে কোর্ট ম্যারেজ অনেকটাই বিরোধিতা পোষণ করে।
এখানে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় রয়েছে যে আপনি যখন কোর্ট ম্যারেজ করবেন তখন বলব যে কোর্টে কখনো বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয় না। তাই আপনাকে এই কোর্ট ম্যারেজ বলতে গেলে কোন একটা কাজী অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে এবং সেখানে দোয়া দরুদ এর মাধ্যমে আপনার বিয়ের কাজ সম্পন্ন হবে। মুসলিম ধর্ম অনুযায়ী আপনাদেরকে এটা বুঝিয়ে দেওয়া হলে এবং যারা হিন্দু ধর্মালম্বী রয়েছেন এবং কোর্ট ম্যারেজ করবেন বলে ভাবছেন তাদেরকেও উকিলের মাধ্যমে এই বিষয়গুলো শুধু কাগজে-কলমে লিপিবদ্ধ থাকবে।
কোর্ট ম্যারেজ করতে কত টাকা লাগে
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোর্ট ম্যারেজ করার জন্য বেকার যুবকেরা প্রিয় মানুষটিকে পাওয়ার জন্য এটা করে থাকেন। তাই কোর্ট ম্যারেজ করতে গেলে কত টাকা লাগতে পারে সে বিষয়ে যখন জানতে চাইবেন তখন বলব যে কাগজে-কলমে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য যেমনভাবে নির্ধারণ করা হয় ঠিক সেভাবেই একটি কোর্ট ম্যারেজের মূল্য হলো এক হাজার দুইশ টাকা। কিন্তু অনেকটাই চুপিসারে আপনারা এই কাজগুলো করেন এবং অনেকেই এই কাজগুলো স্বাভাবিকভাবে নেয়না বলে অধিক টাকা ইনকামের জন্য অধিক টাকা দাবি করতে পারে। তাই মোটামুটি ভাবে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ আপনারা ধরে রাখুন।
যখন পরিবার আপনাদেরকে মানছে না অথবা আপনি প্রিয় মানুষটিকে চাইলেও অন্যান্য মানুষেরা অনেক বিষয়ের দিকে ভেবে এটা ভালো মনে করছেনা তখন হয়তো কোর্ট ম্যারেজ করে ফেলছেন। একমাত্র পরিবারকে না জানিয়ে এবং আপনার নিজের ইচ্ছা বা স্বাধীনতা অনুযায়ী কোর্ট ম্যারেজ বিয়ে করার সুবিধা পাচ্ছেন এটাই একমাত্র সুবিধা।
কোর্ট ম্যারেজ কি ইসলামে বৈধ
যদি আপনি মুসলিম ধর্মের অনুসারী হয়ে থাকেন এবং কোর্ট ম্যারেজ করে থাকেন তাহলে বলব যে অবশ্যই সেখানে পরিবার উপস্থিত থাকতে হবে। তবে ছেলে পক্ষের পরিবার না থাকলেও মেয়ে পক্ষের পরিবার থাকতে হবে। কারণ ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী একটা ছেলে নিজেই নিজের অভিভাবক হতে পারলেও একটা মেয়ের অভিভাবক হিসেবে বিয়ের আগে তার পিতামাতা যেমন থাকে তেমনি ভাবে বিয়ের পর তার স্বামী হয়ে যায়। কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠানে যদি মেয়ের অভিভাবক হিসেবে তার পিতা অথবা মাতা অথবা অন্য কোন অভিভাবক উপস্থিত না থাকে তাহলে ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী সেটা বৈধ নয়।
অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আপনি যদি কাজী অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রি করেন এবং মেয়ের যদি কোন ধরনের অভিভাবক উপস্থিত না থাকে তাহলে সেই বিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাতিল বলে ঘোষণা করেছেন। রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী অথবা কাগজে-কলমে একত্রে থাকার অনুমতি পেয়ে থাকলেও ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটা কখনোই সমর্থন করে না। আশা করছি কোর্ট ম্যারেজ সম্পর্কে আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গিয়েছেন।