যদি পরিবারের কোন সদস্য মৃত্যুবরণ করে তাহলে আমরা চাইলেই মাঝেমধ্যে গিয়ে সেখানে কবর জিয়ারত করতে পারি। কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে মৃত ব্যক্তির আত্মার মাগফিরাতের কামনা করতে পারি অথবা মৃত ব্যক্তির জন্য পরকালে ভালো থাকতে পারে তার জন্য আল্লাহ পাকের কাছে ফরিয়াদ জানাতে পারি। তাই আপনি যখন কোন কবরের সামনে উপস্থিত হবেন তখন অবশ্যই পাক-পবিত্র হয়ে উপস্থিত হবেন এবং সেখানে কিছু দোয়া দরুদ আমল করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাকের কাছে সেই মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে হবে। আপনাদের জন্য কবর জিয়ারতের বিস্তারিত নিয়ম নিচের দিকে আলোচনা করা হলো।
পরিবারের কোনো সদস্য যদি মৃত্যুবরণ করে অথবা এলাকার যদি কোন সদস্য মৃত্যুবরণ করে এবং আমাদের ভেতরে যদি কবর জিয়ারত করার মানসিকতা থাকে তাহলে অবশ্যই আমরা কবর জিয়ারত করবো। আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমদিকে কবর জিয়ারত করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও পরবর্তীতে তিনি অনুমতি প্রদান করেন। কারণ একজন মানুষ যখন কবর জিয়ারত করবে তখন তার ভিতরে দুনিয়া ও আখিরাতের মধ্যে মেলবন্ধনের সৃষ্টি করবে। কারণ মানুষের ভেতরে দুনিয়া বিমুখতা খুব বেশি পরিমাণে রয়েছে।
একজন মানুষ যখন খাস দিলে কবর জিয়ারত করবে তখন তার ভেতরে অন্তত এই বোধ জাগ্রত হবে যে একদিন তাকে সেই কবরে যেতে হবে। মৃত ব্যক্তির যে অবস্থায় কবরে শায়িত আছে ঠিক সেই অবস্থায় একদিন তার সেখানে থাকতে হবে। তাই দুনিয়ার জীবনে কি করছে অথবা দুনিয়ার জীবনের বিষয়গুলো তাকে কতটা ভাবাচ্ছে সে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার জন্যই কবরের আশেপাশে যাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে এলাকায় যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে তাহলে আপনারা গাফিলতি না করে সেই মৃতের জানাজায় উপস্থিত হবেন এবং কবর দিয়ে আসবেন।
তাই কবর জিয়ারত করার উদ্দেশ্যে যদি আপনি কোথাও যেতে চান তাহলে অবশ্যই সেখানে যেতে পারেন এবং এই ক্ষেত্রে পাক-পবিত্র হয়ে যেতে হবে। কবর জিয়ারত করার জন্য বেশ কিছু আমল রয়েছে এবং এই আমল গুলো আপনারা আগে থেকেই মুখস্ত করে নিবেন। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন এলাকায় জুমার নামাজের পরে ইমাম সহকারে কবরের আশেপাশে সকল মুসল্লী উপস্থিত হয়ে কবর জিয়ারত করে থাকেন। দলবদ্ধ হয়ে কবর জিয়ারত করার ক্ষেত্রে ইমাম সাহেব প্রথমে সূরা ফাতিহা ৩ বার, সূরা ইখলাস তিনবার এবং যেকোনো দুরুদ শরীফ ১১ বার পাঠ করতে বলেন।
এগুলো আমল করা হয়ে গেলে হাত তুলে মোনাজাত করা শুরু করেন। এক্ষেত্রে আপনি যদি একাকী কবর জিয়ারত করতে চান তাহলে উপরের উল্লেখিত দোয়া গুলো আমল করার পাশাপাশি আপনারা চাইলে আয়াতুল কুরসি আমল করতে পারেন। সেই সাথে কবর জিয়ারতের দোয়া গুলো আপনারা অবশ্যই শিখে নিয়ে জিয়ারত করতে যাবেন। আপনার যদি আরো জানাশোনা দোয়া বা সূরা থেকে থাকে তাহলে সেগুলো আমল করতে পারেন। আর যখন হাত তুলবেন তখন আপনাদেরকে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম অনুসরণ করে দোয়া করতে হবে।
নিকট আত্মীয় অথবা পরিবারের সদস্য যদি মারা গিয়ে থাকেন তাহলে দেখা যায় যে সেখানে গিয়ে আমাদের চোখে পানি আসে এবং আমরা অনেক হা হুতাশ করতে থাকি। কিন্তু কখনোই মৃতের কবরের পাশে গিয়ে আফসোস করা যাবে না। আপনি যে সকল দোয়া বা আমল করেছেন সেগুলো যেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রওজা মোবারক গিয়ে পৌঁছায় তার জন্য আল্লাহ পাকের কাছে ফরিয়াদ জানাতে হবে। সেই সাথে সেখানকার যে কবরবাসীর উদ্দেশ্যে দোয়া করছেন সেই কবরবাসী সহ আশেপাশে যে সকল কবরবাসী রয়েছে তারা যেন কাল কেয়ামত পর্যন্ত অন্ধকার কবরে নূরের আলোয় আলোকিত হয় এবং জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি পাই এভাবে দোয়া করতে হবে।
খুব সুন্দরভাবে তাদের জন্য আপনারা দোয়া করবেন এবং তাদের কাছে কখনোই কোনো বিষয় যাওয়া যাবে না অথবা মানত করা যাবে না। অর্থাৎ কবরবাসীর মৃত্যুবরণ করেছেন বলে তাদের কাছে আপনারা মনের বিষয়গুলো খুলে বলবেন অথবা কোন কিছু চাইবেন এমনটা কোন কিছুই করা যাবে না। মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করতে গিয়েছেন এবং তাদের আখিরাতের জীবন যেন খুব সুন্দর ভাবে কাটে এভাবে দোয়া করতে হবে। আর যদি পারেন তাহলে মৃত ব্যক্তির জন্য বেশি বেশি করে চুপি চুপি দান খয়রাত করবেন।