কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। কাজী নজরুল ইসলামকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়। মূলত তিনি জাতীয় কবি হলেও বিদ্রোহী কবি নামে বেশি পরিচিত। কাজী নজরুল বাঙালি কবি এবং কাজী নজরুল অনেক বেশি সুন্দর সুন্দর কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ইত্যাদি লিখে গেছেন। তার এসব বিখ্যাত লেখার মাধ্যমে সে বেঁচে আছে। তার এসব লেখার মাধ্যমে সে অমর হয়ে আছে আমাদের মাঝে। এছাড়াও কাজী নজরুল নজরুল ইসলাম অনেক সুন্দর সুন্দর ইসলামিক গান বা ইসলামিক গজল লিখে গেছেন, যে সকল ইসলামিক গানগুলো শুনলে বা বাজলেই কাজী নজরুল ইসলামের কথা অনেক বেশি মনে পড়ে বা কাজী নজরুলের কথা অনেক বেশি স্মরণ হয়।
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। আর বাংলাদেশের মানুষ তাকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় সমাহিত করেছেন। কাজী নজরুল ইসলাম নামটা বাঙালি জাতির জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কাজী নজরুল ইসলামকে বাদ দিয়ে বাংলা সাহিত্য পূর্ণতা লাভ করতে পারবে না। এজন্য বাংলা সাহিত্যে বিশেষভাবে কাজী নজরুলের অবদান স্বীকার করতেই হবে।
তাছাড়া কাজী নজরুল ইসলাম তার বিভিন্ন লেখায় বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সুন্দর উক্তি বলে গেছেন। যে উক্তিগুলো অমর হয়ে আছে এবং প্রায় সব মানুষই সেই উক্তিগুলো পছন্দ করে। অনেক মানুষ দেখা যায় যে কাজী নজরুলের বিভিন্ন লেখা পড়তে খুব ভালোবাসে বা তার অনেক ভক্ত হওয়ার কারণে কাজী নজরুলের প্রায় সব লেখাগুলো সে পড়েছে এবং কাজী নজরুলের বিভিন্ন লেখা দেখলে পড়তে চায়। কাজী নজরুলের বিভিন্ন বই কিনা তার অনেক বড় শখ হিসেবে পরিগণিত হয়। এই ধরনের মানুষগুলো কাজী নজরুলকে অনেক বেশি শ্রদ্ধা করেন এবং তার লেখার প্রতি অনেক বেশি ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য এ ধরনের কাজ করে থাকেন। মূলত কাজী নজরুল ইসলাম এমন একটি লেখক, যার লেখা খুব বেশি আকর্ষণ করে পাঠক সমাজকে এবং পাঠক সমাজ গভীর মনোযোগ দিয়ে তার লেখাগুলো পড়তে পছন্দ করে।
আবার অনেক সময় দেখা যায় যে কাজী নজরুল ইসলামের বিভিন্ন উক্তি পড়তে অনেকেই ভালোবাসে। এজন্য বিভিন্ন সময় তারা কাজী নজরুলের বিভিন্ন লেখা থেকে বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সুন্দর উক্তিগুলো সংগ্রহ করে নিজের কাছে রাখতে চায়। আবার সেগুলো পড়তে অনেক ভালোবাসে। তাই তারা কাজী নজরুল ইসলামের উক্তিগুলো অনেক সময় অনলাইনে সার্চ করে সংগ্রহ করতে চায়। মূলত তাদের কথা মাথায় রেখে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত সব উক্তির মাধ্যমে। এখানে কাজী নজরুল ইসলামের বাছাই করা সুন্দর সুন্দর উক্তি গুলো দেওয়া হয়েছে। আপনি যদি কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি গুলো সংগ্রহ করতে চান, তাহলে আর্টিকেলটি পড়তে পারেন। আশা করি আর্টিকেলটি থেকে আপনি খুব চমৎকার উক্তিগুলো পেয়ে যাবেন।
কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালে আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সে ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন ধরনের দারিদ্রতার মধ্য দিয়ে বড় হয়। তার জীবন সংগ্রামের ইতিহাস অনেক বেশি কঠিন। সে আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে বিভিন্নভাবে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। তবে কাজী নজরুল ইসলাম সবসময়ই অবহেলিতদের অধিকার আদায়ের লেখা লিখতেন। অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিলেন। এজন্য তার লিখায় এই বিষয়গুলো অনেক ফুটে উঠেছে। তাই তাকে বিদ্রোহী কবি নামে অভিহিত করা হয়।
১
মৌ-লোভী যত মৌলবি আর মোল-লা’রা কন হাত নেড়ে
দেব-দেবী নাম মুখে আনে সবে দাও পাজিটার জাত মেরে
ফতোয়া দিলাম কাফের কাজী ও
যদিও শহীদ হইতে রাজি ও
আমপারা পড়া হামবড়া মোরা এখনও বেড়াই ভাত মেরে
হিন্দুরা ভাবে পার্শী শব্দে কবিতা লেখে ও পা’ত নেড়ে।
২
ও কারা কোরাণ বেদ বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি
ও মুখ হইতে কেতাব গ্রন্থ নাও জোর করে কেড়ে
যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে
পুজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল! – মুর্খরা সব শোন
মানুষ এনেছে গ্রন্থ; গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনও।
৩
কপালে সুখ লেখা না থাকলে সে কপাল পাথরে ঠুকেও লাভ নেই। এতে কপাল যথেষ্টই ফোলে, কিন্তু ভাগ্য একটুও ফোলে না।
৪
বসন্ত মুখর আজিদক্ষিণ সমীরণে মর্মর গুঞ্জনেবনে বনে বিহ্বল বাণী ওঠে বাজি।
৫
কামনা আর প্রেম দুটি হচ্ছে সম্পুর্ণ আলাদা। কামনা একটা প্রবল সাময়িক উত্তেজনা মাত্র আর প্রেম হচ্ছে ধীর প্রশান্ত ও চিরন্তন।
৬
হিন্দু না ওরা মুসলিম এই জিজ্ঞাসে কোন জন হে, কাণ্ডারি বল ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র।
৭
আমরা সবাই পাপী;
আপন পাপের বাটখারা দিয়ে;
অন্যের পাপ মাপি!
৮
আমি বন্ধনহারা কুমারীর বেনী, তন্বী নয়নে বহ্নি, আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি।
৯
মওলানা মৌলবি সাহেবকে সওয়া যায়, মোল্লাও চক্ষুকর্ণ বুজিয়া সহিতে পারি, কিন্তু কাঠমোল্লার অত্যাচার অসহ্য হইয়া উঠিয়াছে। ইসলামের কল্যাণের নামে ইহারা যে কওমের জাতির ধর্মের কি অনিষ্ট করিতেছেন তাহা বুঝিবার মত জ্ঞান নাই বলিয়াই ইহাদের ক্ষমা করা যায় না। ইহারা প্রায় প্রত্যেকেই ‘মনে মনে শাহ ফরীদ, বগল মে ইট’। ইহাদের নীতি ‘মুর্দা দোজখ মে যায় আওর বেহেশত মে যায়, মেরা হালুয়া রুটি সে কাম’।
১০
যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুঁছবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
১১
আমার যাবার সময় হল দাও বিদায়
মোছ আঁখি দুয়ার খোল দাও বিদায়।
১২
মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই
যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।
১৩
মিথ্যা শুনিনি ভাই
এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনও মন্দির-কাবা নাই।
১৪
তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সে কি মোর অপরাধ?
চাঁদেরে হেরিয়া কাঁদে চকোরিণী বলে না তো কিছু চাঁদ।
১৫
নামাজ পড়, রোজা রাখ, কলমা পড় ভাই,
তোর আখেরের কাজ করে নে সময় যে আর নাই।
১৬
গিন্নির চেয়ে শালী ভালো।
১৭
বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে, আমরা তখনও বসে- বিবি তালাকের ফতোয়া খুঁজেছি, ফিকাহ ও হাদিস চষে।
১৮
আসে বসন্ত ফুল বনে সাজে বনভূমি সুন্দরী;
চরণে পায়েলা রুমুঝুমু মধুপ উঠিছে গুঞ্জরি।
১৯
প্রেম হল ধীর প্রশান্ত ও চিরন্তন।
২০
তোমারে যে চাহিয়াছে ভুলে একদিন, সে জানে তোমারে ভোলা কি কঠিন।
২১
বিদ্রোহী মানে কাউকে না মানা নয়। যা বুঝিনা তা মাথা উঁচু করে বুঝি না বলা।
২২
নুড়ি হাজার বছর ঝরণায় ডুবে থেকেও রস পায় না।
২৩
বিশ্বাস করুন,আমি কবি হতে আসিনি,আমি নেতা হতে আসি নি-আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম,প্রেম পেতে এসেছিলাম-সে প্রেম পেলামনা বলে আমি এই প্রেমহীন নীরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চির দিনের জন্য বিদায় নিলাম।
২৪
মৃত্যুর যন্ত্রণার চেয়ে বিরহের যন্ত্রণা যে কতো কঠিন, কতো ভয়ানক তা একমাত্র ভুক্তভুগিই অনুভব করতে পারে।
২৫
আসে বসন্ত ফুল বনে সাজে বনভূমি সুন্দরী;
চরণে পায়েলা রুমুঝুমু মধুপ উঠিছে গুঞ্জরি।
কাজী নজরুল ইসলাম তার বিখ্যাত লেখনীর মাধ্যমে স্মরণ হয়ে আছেন বাঙ্গালির হৃদয়ে। কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৭৬ সালে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর তাকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়েছে৷ কাজী নজরুল ইসলাম মূলত তার কালজয়ী লেখা ও উক্তিগুলোর মাধ্যমে বাঙালি পাঠক সমাজের মন আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তার বিভিন্ন লেখা এবং ইসলামিক গানগুলো বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। তাছাড়া তার বিখ্যাত উক্তিগুলোর মাধ্যমে সে বাঙালিদের মাঝে চিরকার বহমান থাকবেন।