শৈশব নিয়ে উক্তি

একটা সময় ছিল যখন আমাদের শৈশব সম্পূর্ণ অন্যরকম ছিল। কিন্তু আজকের শিশুদের শৈশব আমাদের মত কখনোই সুন্দর হতে পারবে না। কারণ তাদের শৈশবের স্মৃতি বলে কিছুই তৈরি হবে না। কোথায় হারিয়ে ফেলেছি সেই শৈশব এবং সেই সুন্দর সোনালী মুহূর্তগুলো। আজও হাজারো ব্যস্ততার মাঝে মনে পড়ে যায় শৈশবের সেই দিনগুলো। জীবনে আর কোনদিন ফিরে পাওয়া হবে না শৈশব। ব্যস্ততার জীবনে বেঁচে থাকার ত্যাগ দিয়ে জীবন ছুটে চলেছে। যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে আমি আবার আমার শৈশবে গিয়ে সে দিনগুলো পুনরায় উপভোগ করতে চায়। জীবনে যদি কোন একটা বিশেষ ক্ষমতা থাকতো তাহলে আবার শৈশবের দিনগুলোই ফিরে পেতে চায়।

আমাদের সেই শৈশব গ্রামের মেঠো পথে কেটেছে। তখন আমরা মনের আনন্দে প্রাকৃতির সঙ্গে বড় হয়েছি। কিন্তু এখনকার বাচ্চাদের জীবন এবং আমাদের শৈশবের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। আধুকিতার এই যুগে আমাদের শিশুদের শৈশব বলে কিছু থাকছে না। ভালো রেজাল্ট আর শিক্ষিত এই দুই তকমা লাগানোর জন্য প্রতিটি অভিভাবকই এখন হন্যে প্রায়। আগে বলা হতো শিশুর বয়স হলে ছয়, ভর্তি কর বিদ্যালয়। আর এখন সেটা অনেকটা এমন যে ‘বাচ্চা যখন জন্ম নেয়, প্রাইভেট তার চালু হয়। তিন বছরের শিশুর জন্যও সকাল-বিকাল দুই বেলা টিউটর রেখে দেওয়ার ঘটনা দেখায় যায়।

আমাদের শৈশবে ছিল না কোন বাধা নিষেধ। আমরা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে খেলা করে দুরন্ত জীবন পার করেছি। ছিল না কোন আভিজাত্য এবং ছিল না কোন বিলাসিতা। কিন্তু এখনকার বাচ্চারা কথা বলা শেখার আগেই তাদের কথা বলা শেখানোর জন্য প্রাইভেট টিউটর রাখা হয়। তারপর তাদের অতি অল্প বয়সেই লেখাপড়ার সঙ্গে অভ্যস্ত করানো হয়। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক গেজেটের মাধ্যমে তাদের মনোরঞ্জন করানো হয়। এখনকার বাচ্চাদের জীবন বড়ই ব্যস্ততার মাঝে কেটে যায়। তারা তাদের শৈশব কে অনুভব করতে পারে না। স্কুল, কম্পিউটার, টিউটর, এইসবের মধ্যে দিয়েই তাদের সারাদিন কেটে যায়। এরপর সকালে প্রাইভেট। স্কুল শেষে বিকালে প্রাইভেট। স্কুলের কাজ, প্রাইভেটের কাজ এগুলো করতে করতে দিন শেষ। ছেলেমেয়েদের বিনোদন বলে কিছু নেই।

নানা রকম সিলেবাস আর কারিকুলামের বেড়াজালে বিলীন হয়ে গেল রঙিন সেই শৈশব। আধুনিকতার ছোঁয়া যখন আরও পেয়ে বসল তখন শিশুর শৈশব খেয়ে দিল মোবাইল ফোন। সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ মুছতে মুছতে গিয়ে আব্বু কিংবা আম্মুর ফোন ধরে। এরপর শুরু হয় গেম খেলা, নয়তো কার্টুন দেখা। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে বই রেখে ড্রেস না খুলেই বসে পড়ে ফোন নিয়ে। এখনকার ছেলেমেয়েদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের ব্যাঘাত ঘটছে কারণ তারা নিয়মিত খেলাধুলা করে না। একসময় তারা এই ইলেকট্রনিক গেজেট ব্যবহার করার জন্য শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে। একজন শিশুর শারীরিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা খুবই বেশি জরুরী। তাই আধুনিকতার এই জগতে আমাদের একটু সচেতন হওয়া খুবই প্রয়োজন।

যারা ১৯৯০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে তাদের শৈশব ছিল খুব সুন্দর। আমরা যারা ১৯৯০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছি এবং আমাদের জেনারেশনের সব ছেলেমেয়েরাই জানে তাদের শৈশবের দিনগুলো কেমন ছিল। আমরা এখন আমাদের শৈশবের সেই দিনগুলোকে খুব বেশি মিস করি। আর এখন যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়া এর মাধ্যমে আমরা যেকোনো তথ্য যেকোনো কারো কাছে শেয়ার করতে পারি তাই আমাদের সুন্দর শৈশবের মুহূর্তগুলো এবং শৈশবের স্মৃতিগুলো কিন্তু আমরা শেয়ার করতে পারি।

শৈশব নিয়ে উক্তি

১। অসুখী সে যার শৈশবের স্মৃতি সুধুমাত্র ভয় ও দুঃখের
— লাভক্রাফট

২। শৈশব হলো ভুল করার সময়, যেখানে মানুষ ভুল করেই শেখার জন্য।
— ফ্লেচার

৩। কৈশোর হলো এক দুর্দান্ত বাগান যা ফুলের মতো শিশুদের পরিপক্ব বানায়।
— পেট্টি স্মিথ

৪। সপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রয়োজন একটি সুন্দর এবং কৌতূহলী শৈশব।
— মায়ারুডলফ

৫। কৈশোর হলো মনুষ্যত্ব অর্জনের প্রকৃত সময়।
— উমা থুরমান

৬। তুমি তোমার কৈশোরকে অবশ্যই ভালোভাবে, ভালো দিকে প্রসারিত করতে হবে, যা অধিকাংশরাই পারেনা।
— বেন মন্ডেলসন

 

৭। সবার শৈশবে সবসময়ই একটি মুহূর্ত থাকে যখন মানুষের ভবিষ্যতের দরজা খুলে যায়।
— গ্রাহেম গ্রীনী

৮। কৈশোরকেকে বিস্মিতভাবে গড়ে তুলতে পারলেই ভবিষ্যতের বিশ্বকে বিস্মিত করা যাবে।
— জেন্না ফিসচার

৯। শৈশব ও কৈশোর থেকে সবেমাত্র পালিয়ে যাওয়া তাদের কমনীয়তা নয়, যারা ইতিমধ্যে তাদের ভবিষ্যতের অধিকার নিয়েছেন।
— কোকো চ্যানেল

১০। তুষার এবং কৈশোরের একমাত্র সমস্যা হ’ল আপনি যদি এগুলিকে দীর্ঘক্ষণ অবহেলা করেন তবে অদৃশ্য হয়ে যায়।
— আর্ল উইলসন

১১। প্রাপ্তবয়স্করা কেবল অপ্রচলিত শিশু যারা শৈশবকে পিছনে ফেলে এসেছে।
— ডাক্তার সেউস

১২। কৈশোর একটি নতুন জন্ম, কারণ উচ্চতর এবং সম্পূর্ণরূপে মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলি এই সময়েই জন্মগ্রহণ করে।
— জি স্ট্যানলি হল

১৩। আমাদের শৈশবের বুনো বাগানে সবই অনুষ্ঠান যা আমাদেরকে শিক্ষা দেয়।
— পাব্লো নেরুডা

১৪। কৈশোর হলো শৈশব এবং যৌবনের মধ্যে একটি সীমানা। সমস্ত সীমানার মতো, এটিও শক্তিতে মিশ্রিত এবং বিপদে পূর্ণ।
— মেরি পাইফার

১৫। জীবনের সবচেয়ে ভাগ্যবান বিষয়গুলির মধ্যে একটি হলো সুন্দর এবং সুখী শৈশব যা সবার জীবনে আসেনা।
— আগাথা খ্রিষ্টই

এখনকার বাচ্চারা বোঝেনা যে যদি বিদ্যুৎ না থাকতো তাহলে জীবন যাপন কেমন হতো?এখনকার বাচ্চারা বোঝেনা যে মোবাইল ছাড়াও একদিন মানুষ জীবন যাপন করেছে। মাটির চুলায় রান্না করেছে।সন্ধ্যাবেলা প্রদীপ জ্বালিয়ে পড়াশোনা করেছে। এখনকার বাচ্চাদের কাছে এইসব জিনিসগুলো খুব অচেনা। তারা জানে না যে কিভাবে বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে খেলাধুলা করতে হয়।কিভাবে বন্ধুদের সাথে, মজা এবং খুনসুটি করতে হয়। তাই এখনকার বাচ্চাদের কাছে আমাদের জেনারেশনের সেই সোনালী দিনগুলোর কথা অবশ্যই শেয়ার করা দরকার।সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা কিন্তু আমাদের সুন্দর শৈশব গুলো এখনকার জেনারেশনের বাচ্চাদের কাছে তুলে ধরতে পারি।

Leave a Comment