নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে আপনি যখন অন্যের প্রতি জুলুম করবেন তখন সেটা খুবই খারাপ একটা বিষয় হবে। সামাজিক দৃষ্টিকোণের মধ্য দিয়ে সেটা যেমন আপনাকে নিচু পর্যায়ে নিয়ে যাবে তেমনি ভাবে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আপনার অনেক পাপ হবে। কোন না কোন দিক থেকে আপনার যদি ক্ষমতা থেকে থাকে তাহলে মনে করতে হবে সৃষ্টিকর্তা আপনাকে এটা প্রদান করেছেন এবং এই ক্ষমতার অপব্যবহার করা উচিত নয়। ক্ষণস্থায়ী এই পৃথিবীতে এসে আপনি যদি নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেন এবং তার দ্বারা যদি অন্য কোন মানুষের কষ্টের কারণ হয়ে থাকে তাহলে সেটা দ্বারা আপনি নিজে পাপ অর্জন করলেন।
মহান সৃষ্টিকর্তা এই পৃথিবীতে আমাদেরকে তার ইবাদত করার জন্য পাঠিয়েছেন এবং মানব সেবা করার জন্য পাঠিয়েছেন। কিন্তু কোন একজন ব্যক্তি আপনাকে আঘাত দিয়েছে এবং আপনি পরবর্তীতে সুযোগ পেয়ে তার প্রতি যদি জুলুম করার চেষ্টা করেন তাহলে সেটা করলে আপনার অনেক পাপ হবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোন মানুষকে ক্ষমা করার মানসিকতা রাখতে হবে তাহলে দেখা যাবে যে আপনি সুস্থ স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে পারছেন এবং আপনার মন প্রশান্তিতে ভরে যাচ্ছে।
তাই আমাদের সমাজে যে সকল ব্যক্তি অন্যের প্রতি জুলুম করে তারা কিন্তু নিকৃষ্ট মানের মানুষ। জুলুম করে আপনি হয়তো সাময়িকভাবে সুখী হবেন অথবা জুলুম করার মধ্য দিয়ে কোন একটা অর্জন করতে পারবেন কিন্তু সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। যখন আপনার ভেতরে আত্ম উপলব্ধি আসবে তখন হয়তো সেই লোকের কাছে ক্ষমা চেয়েও আর ক্ষমা পাওয়া যাবে না। তাই জুলুম করা যাবে না অথবা কারো প্রতি খারাপ ব্যবহার করা যাবে না অথবা কোন ভাবে কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না এমন মানসিকতা নিয়ে আমাদের এই পৃথিবীর বুকে চলতে হবে।
জুলুম এখন করলেন কিন্তু পরবর্তীতে সেই ব্যক্তি হয়তো আপনার উপর আবার প্রতিশোধ স্পৃহার জায়গা থেকে প্রতিশোধ নিতে পারে। তাই কেউ কষ্ট দিয়েছে অথবা কোন সম্পদ কেড়ে নিয়েছে তাহলে সেই ক্ষেত্রে আপনারা সামাজিকভাবে বিচার করার চেষ্টা করুন এবং সেটা যদি না পারেন তাহলে সৃষ্টিকর্তার কাছে বিচার দিলে তিনি অবশ্যই ন্যায় বিচারক এর ভূমিকা পালন করবেন। আর জুলুম অর্থে আপনারা যখন অন্য মানুষকে কষ্ট দিবেন অথবা অন্যের উপরে কোন কিছু চাপিয়ে দেবেন তখন সেই ব্যক্তির জন্য তা খুবই কষ্টকর হবে।
জুলুম নিয়ে কবিতা
যুগে যুগে মানুষজন বড়লোকদের থেকে বা ক্ষমতা আছে এমন ব্যক্তিদের থেকে জুলুমের শিকার হয়েছেন। আর লেখক সমাজ এ বিষয়গুলো খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যাতে করে জুলুমের বিষয়ে সাধারণ মানুষ জানতে পারে। সাধারণ মানুষকে নিয়েই যেহেতু কবিরা লিখে গিয়েছেন সেহেতু এই বিষয়গুলো খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে কবিতার মাধ্যমে অথবা বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে। তাই আপনি যখন জুলুম নিয়ে বিভিন্ন কবিতা পড়ার চেষ্টা করবেন অথবা এ বিষয়ে যখন জানার আগ্রহ থাকবে তখন বিভিন্ন লেখকদের এ সকল কবিতা পড়ে নিতে পারেন।
জুলুম নিয়ে ইসলামিক উক্তি
ইসলাম ধর্মে আপনি যদি অন্যের প্রতি জুলুম করেন অথবা অন্য কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকেন এবং সেই ব্যক্তি যদি মনের দিক থেকে কষ্ট পায় অথবা আপনার জুলুমের শিকার হয় তাহলে এটা অনেক বড় পাপ হবে। অর্থাৎ অন্যের প্রতি জুলুম করার পর সেই ব্যক্তি যদি আপনাকে ক্ষমা না করেন তাহলে আপনি কাবা শরীফের গিলাব ধরে কান্নাকাটি করলেও কিন্তু ক্ষমা পাবেন না। তাই অন্যের প্রতি জুলুম করার থেকে একটু বিবেচনা করুন এবং একজন মুসলিম হিসেবে অন্য মুসলিমের প্রতি জুলুম করা কখনোই উচিত নয়।
জুলুম নিয়ে উক্তি হাদিস
১/ অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য কথা বলা সবচেয়ে বড় জিহাদ ।
— হাদিস তিরমিজি
২/ প্রতিটি অত্যাচারী মানুষকেই একদিন না একদিন অত্যাচারীত হতে হবে।
– হুমায়ুন আজাদ
৩/ অন্যের উপর অত্যাচার করে যে অত্যাচারী শান্তি পায় তার অন্তর মানুষের নয়।
– হেনরি ফোর্ড
৪/ জুলুম ও অত্যাচারী মানুষদের কিয়ামতের দিন অন্ধ করে দেওয়া হবে।
– সংগৃহীত
৫/ একজন মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় জিহাদ হলো একজন অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য কথা বলা।
– স্টিফেন হকিং
৬/ অত্যাচারীদের অত্যাচারীত হওয়ার ঘটনা দেখে একদিন সাধারণ জনতা হাসবে, সেদিন অবশ্যই আসবে এবং তা বেশি দূরে নয়।
– স্টিভ জবস
৭/ তোমার বিদ্যাই তোমাকে অত্যাবারীত করতে পারে আবার অত্য্যাচারীর অত্যাচার থেকে বাঁচাতে পারে, তাই সময় থেকতে এর সঠিক ব্যাবহার শিখে নাও।
– বার্ট্রান্ড রাসেল
৮/ অত্যাচারী ব্যাক্তিদের সমাজে সকলেই ঘৃণা করে এবং তাদের সবথেকে বড় ব্যর্থতা হলো তারা পরবর্তীতে নিজেদেরকে অত্যাচারীত হওয়া থেকে দূরে রাখতে পারবেনা।
– ক্যাথরিন পালসিফার
৯/ অত্যাচারীর অত্যাচার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত, তারপর তার অত্যাচারীত হওয়ার সময় চলে আসে।
– কনফুসিয়াস
১০/ অত্যাচারীরা মানুষকে অত্যাচারের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিনিয়ত আরো বেশি শক্তিশালী করে তোলে।
– হিটলার
১১/ অত্যাচারী মানুষদের পদচিহ্নও আমি স্পর্শ করতে চাইনা, কারণ তারা জঘন্য।
– রিমারক জাকভিচ
১২/ অত্যাচারী মানুষদের জীবন কখনো সুখের হয়না, কারণ তারা অন্যদের সুখ ছিনিয়ে নিয়েই সারাজীবন পার করে দেয়।
– মহত্মা গান্ধী
১৩/ যে অত্যাচারী ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষের উপর অত্যাচার করে সে সবথেকে বড় বিধর্মী।
– হুমায়ুন আজাদ
১৪/ মানুষদের উপর অত্যাচারীদের অত্যাচার করার পূর্বে ভাবা উচিৎ যে তারা উভয়ই মানুষ, উভয়ের দেহের অভ্যন্তরে একই রক্ত-মাংস রয়েছে।
– লারো কোপারতো
১৫/ শ্রেষ্ঠ নেতা হলেন তারাই যারা অত্যাচারী নন, তারা তাদের প্রজাদের ভুল ধরে দিয়ে তাদের আরেকটা সুযোগ দেয়, তাদের উপর অত্যাচার করেনা।
– মিস উইলিয়াম
১৬/ পশুরাও মানুষের কষ্ট বোঝে এবং অনেকসময় মানুষের উপর আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকে, অত্যাচারীরা তার থেকেও অধম।
– রবার্ট এ স্ক্লার
১৭/ প্রতিটি মানুষের ভেতরের এক অত্যাচারী স্বভাব রয়েছে, তা নির্দিষ্ট সময়ে বেড়িয়ে আসে।
– ডাকোটা ইয়াং
১৮/ একজন অত্যাচারীর পরিণাম যে কতটা ভয়াবহ সে সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র ধারণাও নেই।
– জণ মিল্টন
অন্য একজন ব্যক্তি যখন কষ্ট পেয়ে আপনার জুলুমের শিকার হয়ে দিন পার করতে থাকবে তখন কিন্তু আল্লাহ পাক আপনার প্রতি রুষ্ট হবেন। সকল দিক থেকে বিবেচনা করতে হবে এবং মুসলিম ধর্ম যেহেতু শান্তির ধর্ম এবং এই ধর্মের মধ্য দিয়ে সকল সমস্যার সমাধান যেহেতু উল্লেখ করা আছে সেহেতু নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে পাপের বোঝা ভারী করবেন না। তাই সকলের সঙ্গে সকলে আমরা মিলেমিশে বসবাস করার চেষ্টা করব।