জীবনানন্দ দাশের প্রকৃতি নিয়ে উক্তি

প্রকৃতি নিয়ে খুব সুন্দর ভাবে প্রত্যেকটা বিষয় উপস্থাপন করেছে এমন যদি কবির নাম আমরা উল্লেখ করি তাহলে প্রথমে চলে আসে জীবনানন্দ দাশের কথা। কারণ আপনি যদি জীবনানন্দ দাশের বিভিন্ন কবিতা পড়েন তাহলে রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থ থেকে কবিতাগুলো পড়লে বুঝতে পারবেন প্রকৃতি নিয়ে কত সুন্দর ভাবে তিনি প্রত্যেকটা বিষয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাই প্রকৃতি নিয়ে যে সকল কবিতা লিখেছেন সেই সকল কবিতা থেকে উল্লেখযোগ্য লাইন আমরা উক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে পছন্দ করি বলে আপনাদের জন্য জীবনানন্দ দাশের প্রকৃতি নিয়ে উক্তি প্রদান করা হলো।

ইংরেজি সাহিত্যে উইলিয়াম ওয়ার্ডস্ওয়ার্থ কে যেমন প্রকৃতির কবি বলা হয়ে থাকে তেমনি ভাবে বাংলা সাহিত্যে জীবনানন্দ দাশকেও কিন্তু প্রকৃতির কবি বলা হয়। কারণ বাংলার প্রত্যেকটা বিষয় তিনি এত সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এবং প্রত্যেকটি উপাদানকে এত প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যবহার করেছেন যে আমরা বাংলার প্রকৃতিকে নতুনভাবে চিনতে পারি, বুঝতে পারি ও দেখতে পারি। তাই আপনার যদি প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করতে ইচ্ছা হয় অথবা প্রকৃতির সেই অনাবিল সৌন্দর্য আবার যদি চোখের সামনে লেখার মাধ্যমে ভাসিয়ে তুলতে চান তাহলে জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থটি পড়ে দেখতে পারেন।

আমরা আপনাদের জন্য এই পোষ্টের মাধ্যমে জীবনানন্দ দাশের কবিতা গুলো প্রদান করলাম যাতে করে আপনারা সেই কবিতা পড়ে নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন উক্তি হিসেবে উল্লেখযোগ্য লাইন সংগ্রহ করতে পারেন। এখানকার আলোচনার ভিত্তিতে আপনারা জীবনানন্দ দাশের সুন্দর সুন্দর উক্তিগুলো পড়লেই বুঝতে পারবেন কবি কতটা মনের মাদানী মিশিয়ে প্রত্যেকটা বিষয় উপস্থাপন করেছেন। মনের মধ্যে প্রকৃতির প্রতি এতটা ভালোবাসা না থাকলে কখনোই প্রকৃতি নিয়ে এত সুন্দর করে প্রত্যেকটা বিষয় উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তাই প্রকৃতির প্রতি অথবা গ্রাম বাংলার প্রতি যদি ভালোবাসা বাড়াতেই চান তাহলে জীবনানন্দ দাশের সুন্দর সুন্দর কবিতা গুলো আপনারা অবসর সময় পড়ে দেখতে পারেন।

অনেকেই আছেন যারা প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়াতে গিয়ে খুব সুন্দর ভাবে সেখানে ছবি তুলে থাকেন অথবা ব্যাকগ্রাউন্ড এত সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য রেখে যারা ছবি তোলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আপলোড করেন তাদের ক্যাপশন এর প্রয়োজন হয়। তাই ক্যাপশন হিসেবে প্রকৃতির এই সৌন্দর্যের বিষয়গুলোকে ফুটিয়ে তোলার জন্য আপনারা যদি জীবনানন্দ দাশের কবিতার লাইন গুলো দিতে পারেন তাহলে কিন্তু মন্দ হবে না।

জীবনানন্দ দাশের প্রকৃতি নিয়ে কবিতা

জীবনানন্দ দাশের প্রকৃতি নিয়ে কবিতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থ। এখানে আপনারা প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কবিতা পেয়ে যাবেন এবং প্রত্যেকটি কবিতা সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা হয়েছে বলে তা পড়ার প্রতি এক অন্য ধরনের আগ্রহ কাজ করবে। একটি শব্দ থেকে অন্য শব্দের মধ্যে যে কানেকশন সৃষ্টি করেছেন অথবা প্রকৃতির একটা উপাদানের সাথে আরেকটি উপাদানের যে সামঞ্জস্যতা ফুটিয়ে তুলেছেন তা এক কথায় অসাধারণ এবং অতুলনীয়।

জীবনানন্দ দাশের প্রকৃতি চেতনা

আপনি কি জীবনানন্দ দাশের প্রকৃতি চেতনা সম্পর্কে জানতে চান? শুধু প্রকৃতি সম্পর্কে চেতনা পড়লেই হবে না বরং এই চেতনা তার লেখার মধ্য দিয়ে কিভাবে ফুটে উঠেছে অথবা তিনি কিভাবে তার মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি ফুটিয়ে তুলেছেন তার জন্য কবিতা পাঠ করতে হবে। তাই আমরা আপনাদের জন্য জীবনানন্দ দাশের প্রকৃতি চেতনা সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের কবিতা অথবা বিভিন্ন ধরনের লেখা পড়তে বলছি এই কারণে যে এর মাধ্যমে আপনি বিস্তারিতভাবে ধারণা অর্জন করতে পারবেন। তাই জীবন ও প্রকৃতি নিয়ে ভাবতে চাইলে আপনারা জীবনানন্দ দাশের কবিতাগুলো নির্দ্বিধায়ই পড়ে ফেলতে পারেন।

জীবনানন্দ দাশের প্রেমের উক্তি

#

প্রেম ধীরে মুছে যায়,
নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়,
হয় নাকি?

#

তোমার মুখের রূপ কত শত শতাব্দী আমি দেখি না
খুঁজি না।

 #

শরীর রয়েছে, তবু মরে গেছে আমাদের মন!
হেমন্ত আসেনি মাঠে ,- হলুদ পাতায় ভরে হৃদয়ের বন!

#

চোখে তার
যেন শত শতাব্দীর নীল অন্ধকার!

#

পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন;
মানুষ তবুও ঋণী পৃথিবীরই কাছে।

#

আজো আমি মেয়েটিকে খুঁজি;
জলের অপার সিঁড়ি বেয়ে
কোথায় যে চলে গেছে মেয়ে।

#

আজকে রাতে তোমায় আমার কাছে পেলে কথা
বলা যেত; চারিদিকে হিজল শিরীষ নক্ষত্র ঘাস হাওয়ার প্রান্তর।

#

শেষবার তার সাথে যখন হয়েছে দেখা মাঠের উপরে-
বলিলাম- ‘একদিন এমন সময়
আবার আসিয়ো তুমি- আসিবার ইচ্ছা যদি হয়-
পঁচিশ বছর পরে।’

#

থমথমে রাত,- আমার পাশে বসল অতিথি,-
বললে,- আমি অতীত ক্ষুধা,-তোমার অতীত স্মৃতি!

১০#

আমরা হেঁটেছি যারা নির্জন খড়ের মাঠে পউষ সন্ধ্যায়, দেখেছি মাঠের পারে নরম নদীর নারী ছড়াতেছে ফুল কুয়াশার কবেকার পাড়াগার মেয়েদের মতো যেন হায় তারা সব আমরা দেখেছি যারা অন্ধকারে আকন্দ ধুন্দুল জোনাকিতে ভরে, গেছে; যে মাঠে ফসল নাই তাহার শিয়রে চুপে দাঁড়ায়েছে চাঁদ — কোনো সাধ নাই তার ফসলের তরে

১১#

“কী কথা তাহার সাথে? – তার সাথে!
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মতো তুমি আজ,
তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে।”

১২#

জীবন গিয়েছে চলে আমাদের কুড়ি কুড়ি বছরের পার-
তখন আবার যদি দেখা হয় তোমার আমার! কুড়ি বছর পরে”

১৩#

“আবার আকাশের অন্ধকার ঘন হয়ে উঠেছে :
আলোর রহস্যময়ী সহোদরার মতো এই অন্ধকার।
যে আমাকে চিরদিন ভালোবেসেছে
অথচ যার মুখ আমি কোনদিন দেখিনি,
সেই নারীর মতো
ফাল্গুন আকাশে অন্ধকার নিবিড় হয়েছে উঠছে।”

১৪#

“কাল রাতে – ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হল তার সাধ ।”

১৫#

যে জীবন ফড়িংয়ের দোয়েলের – মানুষের সাথে তার হয় নাকো দেখা”

১৬#

“শেষবার তার সাথে যখন হয়েছে দেখা মাঠের উপরে
বলিলাম: ‘একদিন এমন সময়
আবার আসিয়ো তুমি, আসিবার ইচ্ছা যদি হয়!–
পঁচিশ বছর পরে!”

১৭#

“তবু তোমাকে ভালোবেসে
মুহূর্তের মধ্যে ফিরে এসে
বুঝেছি অকূলে জেগে রয়
ঘড়ির সময়ে আর মহাকালে যেখানেই রাখি এ হৃদয় ।”

১৮#

“সুরঞ্জনা,
তোমার হৃদয় আজ ঘাস :
বাতাসের ওপারে বাতাস –
আকাশের ওপারে আকাশ।”

১৯#

পৃথিবীর সব ঘুঘু ডাকিতেছে হিজলের বনে;
পৃথিবীর সব রূপ লেগে আছে ঘাসে;
পৃথিবীর সব প্রেম আমাদের দু’জনার মনে;
আকাশ ছড়ায়ে আছে শান্তি হয়ে আকাশে আকাশে।

২০#

সারাটি রাত্রি তারাটির সাথে তারাটিরই কথা হয়, আমাদের মুখ সারাটি রাত্রি মাটির বুকের’পর।

জীবনানন্দ দাশ যে শুধু প্রকৃতি নিয়ে কবিতা লিখেছেন তা কিন্তু নয় বরং তিনি প্রেম নিয়ে কবিতা লিখেছেন এবং প্রেমের উক্তি ও আপনাদের জন্য এখানে প্রদান করা হচ্ছে। একজন লেখক যখন কোন কিছু লেখেন তখন সর্বসাধারণের জন্য ভেবে লেখেন এবং এক্ষেত্রে সাধারণ জনগণই হয়ে থাকে তার লেখার আসল বিষয়বস্তু। তাই সাধারণ মানুষের জীবন যাপন অথবা সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে যে সকল বিষয়গুলো জড়িত থাকে সেগুলো একজন কবি সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলেন বলে আমরা বিভিন্ন ধরনের লেখা উপহার পাই। ধন্যবাদ।

Leave a Comment