বিদ্রোহের কথা শুনলেই অনেকের মনের মধ্যে অনেক ধরনের সাহস আসার পাশাপাশি অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কথা মাথায় চলে আসে। সাধারণত আমরা যখন নিপীড়িত হয়ে অথবা কেউ যখন আমাদের প্রতি জুলুম করে তখন নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য যে প্রচেষ্টা চালানো হয় অথবা যে ধরনের শক্তি খাটানো হয় সেটাকেই বিদ্রোহ বলা হয়ে থাকে। যুগে যুগে আমাদেরকে বিদ্রোহ করতে হয়েছে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য। আর বর্তমান সময়ে যদি এরকম ধরনের কোথাও অন্যায় দেখেন তাহলে বিদ্রোহ নিয়ে আলোচনা না করলেও অন্তত নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যেতে পারেন।
আমরা যদি নিজেদের জায়গা থেকে দুর্বলতার বিষয়গুলো প্রকাশ করি অথবা নিজেদের অধিকার ছেড়ে দিই তাহলে দেখা যায় যে অনেক সময় সেগুলো নিজেদের সুবিধার্থে গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু যেখানে অভাব অনটন সেখানে যদি আবার নতুন করে অনাকাঙ্খিত অভাব সৃষ্টি করা হয় এবং নতুন করে সকল কিছুর অভাব সকলকে বোঝানো হয়ে থাকে তাহলে এটা জুলুম ছাড়া আর কিছু নই। আর সেই ক্ষেত্রে আমাদের ভেতরে বিদ্রোহের সানাই বেজে ওঠে।
আপনার অধিকার যদি আপনি প্রতিষ্ঠা করতে না পারেন অথবা কেউ যদি আপনার কাছে অন্যায় ভাবে জুলুম করে তাহলে সেটার জন্য আপনাকে রুখে দাঁড়াতে হবে। আর এ বিষয়টা যখন মাথায় আপনি গেঁথে নিতে পারবেন তখন দেখা যাবে যে আপনার ভিতরে বিজয়ের জন্য অথবা বিদ্রোহের জন্য সাহস এবং অনুপ্রেরণা চলে আসছে। সুতরাং আপনারা বিদ্রোহের বিষয়ে যে উক্তিগুলো পড়বেন সেটার মাধ্যমে হয়তো অন্যায় বা অধিকার আদায়ের জন্য অনুপ্রেরণা চলে আসবে এবং নিজেরা সেই দিক থেকে সাহস সঞ্চার করতে পারবেন।
যুগে যুগে আমরা যখন নিপীড়িত হয়েছি অথবা আমাদের প্রতি অন্যায় যখন করা হয়েছে তখন নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা বিদ্রোহ বা যুদ্ধ করেছি। তাই যে যুগেই হোক অথবা যে সময় হোক কেউ যদি আমাদের জন্য খারাপ কিছু করে অথবা আমাদের প্রতি যদি কেউ অন্যায় করে তাহলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমরা প্রতিবাদ ও বিদ্রোহ করার ভাষা যদি খুঁজে পাই তাহলে সেটার মাধ্যমে ভালো থাকতে পারবো। আর যারা বিদ্রোহের উক্তি পড়ার জন্য এখানে এসেছেন তাদের জন্য এ সকল উক্তি অনেক কাজে আসবে বলে মনে করছি।
কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী উক্তি
বিদ্রোহের কবিতার কথা যদি চলে আসে তাহলে সর্বপ্রথমে কাজী নজরুল ইসলামের নাম চলে আসবে। কারণ তিনি তার লেখাতে বিদ্রোহের সুর তুলে ধরেছেন এবং সকলকে সোচ্চার করেছেন। কাজী নজরুল ইসলামের লেখার মধ্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অথবা অধিকার প্রতিষ্ঠার কথাগুলো বারবার উঠে এসেছে বলে তিনি বিদ্রোহী কবি নামে সকলের কাছে পরিচিত হয়েছেন। তাই কাজী নজরুল ইসলামের উল্লেখযোগ্য বিদ্রোহী উক্তি বা কবিতার লাইন গুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরা হলো যাতে করে এগুলো আপনারা বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করতে পারেন।
রাজনৈতিক বিদ্রোহী উক্তি
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কেউ যদি আপনাদের প্রতি অন্যায় করে এবং নিজের না যদি দলকে যদি আপনি প্রতিষ্ঠা করতে চান তাহলে খুব সুন্দর ভাবে সেখানে বিদ্রোহের উক্তি সংযুক্ত করতে পারেন। রাজনৈতিক দল ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন ধরনের সংগঠন যেগুলো অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে অথবা খারাপভাবে আমাদেরকে প্রকাশিত করে সে সকল ক্ষেত্রে আমরা বিদ্রোহের উক্তি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান চালিয়ে যেতে পারি। এক কথায় বিদ্রোহের ব্যাপারে কোন আপস নয় এবং অন্যায় অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করার পরিবর্তে আমরা সবসময় ভালো অধিকার প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করব।
প্রেমের বিদ্রোহী উক্তি
1. “অভাবের দিনে প্রিয় অতিথি আসার মতো পীড়াদায়ক বুঝি আর কিছু নেই। শুধু হৃদয় দিয়ে দেবতার পূজা হয়তো করা যায়, কিন্তু শুধু হাতে অতিথিকে বরণ করা চলে না।” – কাজী নজরুল ইসলাম
2. “আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই। বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।” – কাজী নজরুল ইসলাম
3. “কপালে সুখ লেখা না থাকলে সে কপাল পাথরে ঠুকেও লাভ নেই। এতে কপাল যথেষ্টই ফোলে, কিন্তু ভাগ্য একটুও খোলে না।” – কাজী নজরুল ইসলাম
4. “আমরা সবাই পাপী, আপন পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি।” – কাজী নজরুল ইসলাম
5. “হিন্দু না ওরা মুসলিম এই জিজ্ঞাসে কোন জন হে, কাণ্ডারি বল ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার।” – কাজী নজরুল ইসলাম
“অমি এই দেশে এই সমাজে জন্মেছি বলেই শুধু এই দেশের, এই সমাজের নয়। আমি সকল দেশের সকল মানুষের।” – কাজী নজরুল ইসলাম
6. “পশুর মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে আমাদের লাভ কী, যদি আমাদের গৌরব করার মতো কিছু নাই থাকে।” – কাজী নজরুল ইসলাম
7. “যুগের ধর্ম এই- পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই।” – কাজী নজরুল ইসলাম
8. “বাহিরের স্বাধীনতা গিয়াছে বলিয়া অন্তরের স্বাধীনতাকেও আমরা যেন বিসর্জন না দিই।” – কাজী নজরুল ইসলাম
9. “মিথ্যা শুনিনি ভাই এই হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোনও মন্দির-কাবা নাই।” – কাজী নজরুল ইসলাম
10. “আমার যাবার সময় হল। দাও বিদায়, মোছ আঁখি দুয়ার খোল দাও বিদায়।” – কাজী নজরুল ইসলাম
“মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই, যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।” – কাজী নজরুল ইসলাম
11. “হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান।তুমি মোরে দিয়াছো খ্রিস্টের সম্মান।” – কাজী নজরুল ইসলাম
12. “অসতী মাতার পুত্র সে যদি জারজ পুত্র হয়, অসৎ পিতার সন্তানও তবে জারজ সুনিশ্চিত।” – কাজী নজরুল ইসলাম
13. “ঘুমিয়ে গেছে শান্ত হয়ে আমার গানের বুলবুলি, করুন চোখে বেয়ে আছে সাঁজের ঝরা ফুলগুলি।” – কাজী নজরুল ইসলাম
14. “হাসি দিয়ে যদি লুকালে তোমার সারা জীবনের বেদনা, আজো তবে শুধু হেসে যাও, আজ বিদায় দিনে কেঁদোনা।” – কাজী নজরুল ইসলাম
15. “যার নিজের ধর্মে বিশ্বাস আছে, সে অন্যের ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না।” – কাজী নজরুল ইসলাম
“সত্য যদি লক্ষ্য হয়, সুন্দর ও মঙ্গলের সৃষ্টি সাধনা ব্রত হয়, তবে তাহার লেখা সম্মান লাভ করিবেই করিবে।” – কাজী নজরুল ইসলাম
16. “হিংসাই শুধু দেখেছ এ চোখে, দেখ নাই আর কিছু, সমূখে শুধু রহিলে তাকায়ে, চেয়ে দেখিলেনা পিছু।” – কাজী নজরুল ইসলাম
17. “সত্য যদি হয় ধ্রুব, তোর কর্মে যদি না রয় ছল, ধর্ম দুগ্ধে না রয় জল, সত্যের জয় হবেই হবে আজ নয় কাল মিলবেই ফল।” – কাজী নজরুল ইসলাম
18. “আমারে সকল ক্ষুদ্রতা হতে বাঁচাও প্রভু উদার। হে প্রভু! শেখাও নীচতার চেয়ে নীচ পাপ নাহি আর।” – কাজী নজরুল ইসলাম
19. “নামাজ পড়ো, রোজা রাখো, কলমা পড়ো ভাই, তোর আখেরের কাজ করে নে সময় যে আর নাই।” – কাজী নজরুল ইসলাম
20. “গাহি সাম্যের গান, মানুষের চেয়ে বড়ো কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।” – কাজী নজরুল ইসলাম
প্রেমের ক্ষেত্রে যারা সফল হচ্ছেন না অথবা যারা মনের মানুষকে পাচ্ছেন না তাদের মনের ভেতরে হয়তো অনেক সময় আকাঙ্ক্ষা জাগে যে বিদ্রোহ করার মধ্য দিয়ে হলেও প্রিয় মানুষটাকে জীবনে আপন করে নিতে। তাই এখানে প্রেমের বিভিন্ন ধরনের বিদ্রোহী উক্তি প্রদান করেছি যার মাধ্যমে আপনার মনের ভেতরে এক ধরনের সাহস চলে আসবে। আর আপনারা এখান থেকে প্রেমের বিরহী উক্তি বা বিদ্রোহী উক্তি পড়তে পারছেন বলে সেটার মাধ্যমে নিজেদের ভালোবাসাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যেগুলো করলে ভালো হয় সেগুলো বুঝতে পারছেন।