সাধু ভাষা হল বাংলা লেখার প্রাচীন রূপ, প্রাচীন যুগের সাধু ভাষায় ও চলিত ভাষায় কথা বলা হত। তবে বর্তমান সময়ে চলিত ভাষা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, সাধু ভাষাটা আসলে একটু কঠিন টাইপের হয়ে যাওয়ার কারণে তড়িৎ ভাষাটা যারা বাংলা ভাষাভাষীর মানুষ রয়েছে তারা পছন্দ করে নিয়েছে। আমরা হয়তো অনেকে জানি সাধু শব্দের অর্থ হলো সৃষ্ট ও মার্জিত। রাজা রামমোহন রায় তার বেদান্ত গন্ধে রচনাটি শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।
সাধু ভাষার সঙ্গে প্রমিত বা চরিত ভাষার মিশ্রণ কে আমরা একসাথে করতে পারি। তবে আমাদের যে কোন লেখা লেখার সময় চেষ্টা করতে হবে যে কোন এক ভাষায় লিখতে সেটা হতে পারে সাধু বা চলিত ভাষা।নচেৎ একে “গুরুচণ্ডালী” দোষে দুষ্ট আখ্যা দেওয়া হয়। তবে কবিতার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা যায়।
দর্শনীত কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন গদ্য সাহিত্যে ব্যবহৃত বাংলা ভাষাকে সাধু ভাষা বলা হয়ে থাকে এছাড়াও তিনি এই ভাষাকে সমগ্র বাংলা ভাষাভাষী যারা রয়েছে বঙ্গ দেশের সম্পত্তি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এই ভাষাকে।
মোঃ এনামুল হকের মতে বাংলা ভাষার সংস্কৃত শব্দ ক্রিয়া এবং সর্বনাম পদে পূর্ণরূপ ও ব্যকরণ সিদ্ধ উপাদান ব্যবহার করিয়া ইংরেজি গদ্য সাহিত্যের পদবিন্যাসের প্রণালী অনুসরণে পরিকল্পিত যেই গদ্যোতি বাংলা সাহিত্যে প্রবর্তিত করা হয়েছে তাকে সাধু ভাষা বলে। আসলে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন রকম ভাবে সাধু ও চলিত ভাষাকে উদাহরণ দিয়ে গেছে।
আপনি খেয়াল করলে দেখবেন সাধু ভাষার ভাগ করিতে অনেকটা সু নির্ধারিত এবং ভাষার শব্দের প্রয়োগ ও এতে সর্বনাম ক্রিয়াপদ প্রভাতীর মৌখিক ভাষা রূপ। ভাষা সর্বদা নতুন নতুন ধনী পরিবর্তন করে কিন্তু সাধু ভাষার শব্দের রূপান্তর তেমন দেখা যায় না যেমন চোরের ভাষা বেশি ভাবে লক্ষণীয়।
সাধু ভাষা কাকে বলে
সংজ্ঞা: বাংলা গদ্য সাহিত্যে ব্যবহৃত সংস্কৃত শব্দবহুল সুষ্ঠু, মার্জিত, সর্বজনবোধ্য, অথচ নিয়মবন্ধ ও কৃত্রিম ভাষারূপ হল সাধু ভাষা।
প্রখ্যাত বৈয়াকরণ ও ভাষাতত্ত¡বিদ ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘সাধারন গদ্য-সাহিত্যে ব্যবহৃত বাংলা ভাষাকে সাধু ভাষা বলে।’
সংস্কৃত-ব্যুৎপত্তিসম্পন্ন মানুষের ভাষাকে ‘সাধু ভাষা’ বলে প্রথম অভিহিত করেন রাজা রামমোহন রায়।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ রয়েছে। সেই আধুনিক যুগেই আমরা সাধু ভাষার আবির্ভাব ঘটে। তখন থেকেই সাধু ভাষার শব্দে রূপান্তর তেমন দেখা যায় না যেমন চলিত ভাষায় স্বরসঙ্গী ও অভিস্রোতের প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
বর্তমানে সাধু ভাষার ব্যবহার যে এমন তেমন নেই বললেই চলে তবে কিছু পুরাতন কাগজপত্র দেখা যায় সাধু ভাষার সে লেখাগুলো সেগুলো পূর্ণমোদন না করাই এমন ঘটেছে যেমন জমির দলিলে এখনো সাধু ভাষা দেখতে পাওয়া যায় তবে সাধু ভাষা যে একসময় অবহিত হয়ে পড়বে তা এখন সকলেরই জানা হয়ে গেছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন তার দুই ছিল রানী,সুয়োরানী আর দুয়োরানী। তেমনি বাংলাবাক্যাধীপেরও আছে দুই রানী-একটাকে আদর করে নাম দেওয়া হয়েছে সাধু ভাষা;আর একটাকে কথ্য ভাষা,কেউ বলে চলতি ভাষা, আমার কোনো কোনো লেখায় আমি বলেছি প্রাকৃত বাংলা।
চলিত ভাষা কাকে বলে
সংজ্ঞা সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাকে চলিত ভাষা বলা হয়।প্রখ্যাত ভাষাতত্ত¡বিদ ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গে ভাগীরথী নদীর তীরবর্র্তী স্থানের ভদ্র ও শিক্ষিত সমাজের ব্যবহৃত মৌখিক ভাষা, সমগ্র বাঙ্গালাদেশের শিক্ষিত সমাজ কর্তৃক শেষ্ঠ মৌখিক ভাষা বলিয়া গৃহীত হইয়াছে। এই মৌখিক ভাষাকে বিশেষভাবে ‘চলিত ভাষা ’ বলা হয়।
শিক্ষিত জনসমাজের একরকম মার্জিত কথ্য ভাষার মান্য ও স্বীকৃত রূপকে বলা হয় প্রমিত চলিত ভাষা। ঔপনিবেশিক যুগেই ঊনবিংশ শতাব্দীতে সাহিত্যে সাধু ভাষার ব্যাপক ব্যবহার সত্ত্বেও এর প্রাঞ্জলতা ও প্রাণের স্ফূর্তির অভাব নিয়ে নানা মতবাদের সৃষ্টি হয়। অনেক বিখ্যাত লেখকগণই (বিশেষত প্রমথ চৌধুরী) সহজবোধ্যতার জন্য চলিত ভাষাকেই আদর্শ জ্ঞান করতেন। এমনকি প্রথমদিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাধু ভাষায় লিখলেও পরবর্তীতে তিনিও লেখার জন্য গ্রহণ করে নেন চলিত ভাষাকেই। এভাবে সময়ের সাথে সাথে সর্বক্ষেত্রে চলিত ভাষা গ্রহণীয় হয়ে উঠতে থাকে আর হ্রাস পেতে থাকে সাধু ভাষার প্রয়োগ।