আবুল কালাম আজাদের উক্তি

আবুল পাকির জয়নুল আবেদীন আব্দুল কালাম আজাদ ছিলেন ভারতীয় বিজ্ঞানী এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি। তিনি রাষ্ট্রপতির দিক থেকে একাদশ রাষ্ট্রপতি ছিলেন। বিজ্ঞানী হওয়ার পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু বই লিখেছেন যেগুলো আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই বইয়ের উক্তি অথবা তার জীবনে ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ উক্তিগুলো যদি আমরা জানতে চাই এবং মানার চেষ্টা করি তাহলে অবশ্যই আমাদের জীবন পরিবর্তন হবে।

কারণ জ্ঞান-ই ব্যক্তিরা যখন আমাদের উদ্দেশ্যে কোন কিছু প্রদান করে অথবা কোন কথা বলে যান তখন সেগুলো আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে আসলেই ভূমিকা পালন করে। কারণ তারা যা বলেন সেগুলো বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলেন এবং তাদের এতদিনের শিক্ষা দীক্ষার যে অভিজ্ঞতা রয়েছে সেটার ভিত্তিতে বলেন। তাই আপনাদের উদ্দেশ্যে আমরা আব্দুল কালাম আজাদের গুরুত্বপূর্ণ উক্তি সমূহ নিচের দিকে তুলে ধরলাম।

আমরা যদি আব্দুল কালাম আজাদের সম্পর্কে কোন তথ্য জানতে চাই তাহলে তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২০০২ সালের জুলাই মাসের ২৫ তারিখে কাজ শুরু করেন এবং ২০০৭ সালের ২৫ শে জুলাই তার দায়িত্ব শেষ হয়। তিনি যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং মনমোহন সিংহ। তিনি ১৯৩১ সালের ১৫ই অক্টোবর ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে জন্মগ্রহণ করে থাকেন। ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং এ মৃত্যুবরণ করেন। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং এটাই তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিবেচিত। তিনি বাস্তব জীবনে একজন অধ্যাপক ছিলেন, একজন লেখক ছিলেন এবং বিমান প্রযুক্তিবিদ ছিলেন।

এই রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন ধরনের কাজ করে গিয়েছেন এবং অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে সফলতাতে আরোহন করতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি অফিস ছাড়ার পরেও তিনি কালাম ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট শিলং সহ বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাছাড়া তিনি ইন্ডিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেস, উইংস অফ ফায়ার, ইগনিটেড মাইন,

মিশন ইন্ডিয়া ইত্যাদি বই সমূহ লিখেছেন। তবে তিনি যে সকল গুরুত্বপূর্ণ উক্তি রেখে গিয়েছেন সেগুলো আসলে আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বলে আমরা তা জানার চেষ্টা করব। কারণ এগুলো জেনে নিয়ে যদি আমরা বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত করতে পারি তাহলে খুব সহজেই আমাদের জীবনকে পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যেতে পারবো এবং সফলতার দিকে ধাবিত করতে পারব।

সাধারণত আমরা যারা বাস্তব জীবনে বিভিন্ন বন্ধুর উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকি তারা যদি বই পড়ার প্রতি অভ্যাস গড়ে তুলতে পারে তাহলে অবশ্যই একটা ভালো বই 100 বন্ধুর সমান হিসেবে কাজ করবে। এছাড়াও আমরা সাধারণত বাস্তবিক জীবনে বিভিন্ন ধরনের সফলতার গল্প পড়ে পড়ে অভ্যস্ত হয়ে থাকে এবং সেগুলো যখন আমাদের জীবনে প্রতিফলন করার চেষ্টা করি তখন অনেক সময় হয়তো আমাদের ভুলের কারণে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে থাকে। সেই ক্ষেত্রে তিনি সফলতার গল্প পড়ার পাশাপাশি আমাদের ব্যর্থতার গল্প পড়তে বলেছেন যাতে করে আমরা নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করে সেই পথ থেকে সরে আসতে পারি।

তিনি আমাদের স্বপ্ন পূরণ করার ক্ষেত্রে সেই সকল দিকনির্দেশনা দিয়েছেন যে দিক নির্দেশনার মাধ্যমে আমরা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখার চাইতে জেগে কাজ করার মধ্যে দিয়ে সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারি। আবার বর্তমান সময়ে মানুষ যে পথে পরিচালিত হচ্ছে সেই পথে পরিচালিত হওয়ার ক্ষেত্রে যদি সেটা ভুল পথ হয় তাহলে মানুষকে পরিবর্তন না হয়ে অভ্যাসকে পরিবর্তন করার জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। আপনি যদি সূর্যের মতো নিজেকে সকলের সামনে

১. একটি ভালো বই একশ ভালো বন্ধুর সমান, কিন্তু একজন ভালো বন্ধু একটি লাইব্রেরির সমান।

২. সফলতার গল্প পড়ো না, কারণ তা থেকে তুমি শুধু গল্পটাই পাবে। ব্যর্থতার গল্প পড়ো, তাহলে সফল হওয়ার কিছু উপায় পাবে।

৩. স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে যাও। স্বপ্ন সেটা নয় যা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো, স্বপ্ন হলো সেটাই যা তোমাকে ঘুমোতে দেয় না।

৪. মানুষ তার ভবিষ্যত পরিবর্তন করতে পারে না, কিন্তু অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারে। অভ্যাসই মানুষের ভবিষ্যত পরিবর্তন করে দেয়।

৫. তুমি যদি সূর্যের মতো আলো ছড়াতে চাও, তাহলে আগে সূর্যের মতো পুড়তে শেখো।

৬. উদার ব্যক্তিরা ধর্মকে ব্যবহার করে বন্ধুত্বের হাত বাড়ান। কিন্তু সংকীর্ণমনস্করা ধর্মকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।

৭. নেতা সমস্যায় ভয় পান না। বরং সমস্যার মোকাবিলা করতে জানবেন। তাকে কাজ করতে হবে সততার সঙ্গে।

৮. জাতির সবচেয়ে ভালো মেধা ক্লাসরুমের শেষ বেঞ্চ থেকে পাওয়া যেতে পারে।

৯. ছাত্রজীবনে আমি বিমানের পাইলট হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হয়েছি, হয়ে গেছি রকেট বিজ্ঞানী।

১০. জীবন ও সময় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। জীবন শেখায় সময়কে ভালোভাবে ব্যবহার করতে আর সময় শেখায় জীবনের মূল্য দিতে।

১১. কঠিন কাজে আনন্দ বেশি পাওয়া যায়। তাই সফলতার আনন্দ পাওয়ার জন্য মানুষের কাজ কঠিন হওয়া উচিত।

১২. প্রথম সাফল্যের পর বসে থেকো না। কারণ দ্বিতীয়বার যখন তুমি ব্যর্থ হবে তখন অনেকেই বলবে প্রথমটিতে শুধু ভাগ্যের জোরে সফল হয়েছিলে।

১৩. যারা মন থেকে কাজ করে না, তারা আসলে কিছুই পায় না। আর পেলেও সেটা হয় অর্ধেক হৃদয়ের সফলতা। তাতে সব সময়ই একরকম তিক্ততা থেকে যায়।

১৪. তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার বার্তা হলো- তাদের ভিন্নভাবে চিন্তা করবার সাহস থাকতে হবে। মনের ভেতর আবিষ্কারের তাড়না থাকতে হবে। নিজের সমস্যা নিজে মেটাবার মানসিকতা থাকতে হবে।

১৫. বৃষ্টি শুরু হলে সব পাখিই কোথাও না কোথাও আশ্রয় খোঁজে। কিন্তু ঈগল মেঘের ওপর দিয়ে উড়ে বৃষ্টিকে এড়িয়ে যায়।

১৬. আমি সুপুরুষ নই। কিন্তু যখন কেউ বিপদে পড়েন আমি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই। সৌন্দর্য থাকে মানুষের মনে, চেহারায় নয়।

১৭. কাউকে হারিয়ে দেয়াটা খুব সহজ, কিন্তু কঠিন হলো কারো মন জয় করা।

১৮. তুমি যদি তোমার কাজকে স্যালুট করো, দেখো তোমাকে আর কাউকে স্যালুট করতে হবে না। কিন্তু তুমি যদি তোমার কাজকে অসম্মান করো, অমর্যাদা কর, ফাঁকি দাও, তাহলে তোমার সবাইকে স্যালুট করতে হবে।

১৯. প্রতিদিন সকালে এই পাঁচটা লাইন বলো:

১) আমি সেরা

২) আমি করতে পারি

৩) সৃষ্টিকর্তা সব সময় আমার সঙ্গে আছে

৪) আমি জয়ী

৫) আজ দিনটা আমার

২০. তিনজনই পারেন একটি দেশ বা জাতিকে বদলাতে। তাঁরা হলেন, বাবা, মা ও শিক্ষক।

২১. জীবনে সমস্যার প্রয়োজন আছে। সমস্যা আছে বলেই সাফল্যে এতো আনন্দ।

২২. যে হৃদয় দিয়ে কাজ করে না, শূন্যতা ছাড়া সে কিছুই অর্জন করতে পারে না।

২৩. ফেল করে হতাশ হয়ো না। ইংরেজি শব্দ ফেল ‘Fail’ মানে ‘First Attempt in Learning’ অর্থাৎ ‘শেখার প্রথম ধাপ’। বিফলতাই তোমাকে সফল হবার রাস্তা দেখিয়ে দেবে।

২৪. সেই ভালো শিক্ষার্থী যে প্রশ্ন করে। প্রশ্ন না করলে কেউ শিখতে পারে না। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে।

২৫. সমাপ্তি মানেই শেষ নয়। ‘END’ শব্দটির মানে হচ্ছে ‘Effort Never Dies’ অর্থাৎ ‘প্রচেষ্টার মৃত্যু নেই’।

২৬. আমরা শুধু সাফল্যের উপরেই গড়ি না, ব্যর্থতার উপরেও গড়ি।

২৭. একজন খারাপ ছাত্র একজন দক্ষ শিক্ষকের কাছ থেকে যা শিখতে পারে তার চেয়ে একজন ভালো ছাত্র একজন খারাপ শিক্ষকের কাছ থেকে অনেক বেশি শিখতে পারে।

২৮. উপরে তাকিয়ে আকাশটাকে দেখো। তুমি একা নও, এই মহাবিশ্ব তোমার বন্ধুর মতোই।

২৯. কোনো একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছো না! চিন্তিত করো না- ‘NO’ শব্দের মানে হচ্ছে ‘Next Opportunity’ অর্থাৎ ‘পরবর্তী সুযোগ’।

৩০. স্বপ্ন, স্বপ্ন, স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখে যেতে হবে। স্বপ্ন না দেখলে কাজ করা যায় না।

অভ্যাসিত করতে চান অথবা সূর্যের মতো উজ্জ্বল হতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে আগে সূর্যের মতো করে পুড়তে হবে। এরকমভাবে তিনি সরাসরি অনেক উক্তি রেখে গিয়েছেন অথবা যেগুলো বলে গিয়েছেন সেগুলো আমাদের জীবনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা সকল দিক বিবেচনা করে তাঁর উক্তিগুলো যদি বাস্তবিক জীবনে আমাদের মনের ভেতরে গেঁথে নিতে পারে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে পারি তাহলে অবশ্যই আমরা সঠিক পথে নিজেদের জীবনকে পরিচালনা করতে পারব।

Leave a Comment