একটি তুলসী গাছের কাহিনী

তুলসী গাছ একটি ঔষধি গাছ। তুলসী গাছের পাতায় রস করে খেলে আপনার শরীর থেকে সর্দি কাশি উপশম হয়। যে কয়টি ঔষধি গাছ রয়েছে তার মধ্যে সবথেকে পরিচিত গাছ হলে তুলসী গাছ। তুলসীগঞ্জ অবশ্য ধর্মীয় দিক থেকে তার আলাদা একটি পরিচিতি রয়েছে। এখানে অবশ্য একটি তুলসী গাছের কাহিনীকে অন্যভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের বিখ্যাত কথা সাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচিত একটি অনন্য সাধারণ উপন্যাস ছিল “একটি তুলসী গাছের কাহিনী” এই

শিরোনামে। উপন্যাসিক জনাব সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের কাহিনী অবলম্বন করে এই উপন্যাসটি রচনা করেছিলেন। অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে যে ভারত বিভাগ হয়েছিল অর্থাৎ ধর্মের ভিত্তিতে দুটি দেশ গঠিত হয়েছিল একটি ভারত এবং অন্যটি পাকিস্তান। তখন দেশ বিভাগের বিড়ম্বনে যে ঘটনাগুলি ঘটেছিল তারই একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এই উপন্যাসের মাধ্যমে। অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাজনের পর একটি বাড়ি পরিত্যক্ত হয়। বাড়িটি ছিল জনাই কখনো এক হিন্দু মানুষের।

কিন্তু এই বাড়িটি কিছু মুসলমান যুবকদের দ্বারা দখলকৃত হবার ঘটনা কে কেন্দ্র করে কাহিনী রচিত হয়েছে। এই বাংলা উপন্যাসটি পরে উপন্যাসিক নিজেই অর্থাৎ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ নিজেই “দ্য টেল অব দ্য তুলসী ট্রি”নামে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। এই উপন্যাসের কাহিনীতে যা বলা হয়েছে তা হল-ধর্মের ভিত্তিতে যখন ভারতীয় উপমহাদেশকে দুইটি ভাগে বিভক্ত করা হয় তখন বাংলাদেশ অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে যে সকল হিন্দু পরিবার বসবাস করছিল তারা দেশ ত্যাগ করে কলকাতা তথা ভারতে চলে যায়।

এবং তাদেরই ফেলে রাখা একটি বাড়িতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কিছু চাকরিজীবী পূর্ববঙ্গে অর্থাৎ বর্তমানের বাংলাদেশে আসে। এখানে এসে তারা একটি পরিত্যাক্তকারী দখল করে নেয়। এই পরিত্যক্ত বাড়িটি দখল করে নেওয়া কে তারা ভাগ্যবান বলে মনে করে নিজেদেরকে। এবং অন্যান্য শরণার্থীরা যারা ছিল তারা তাদেরকে হতভাগ্য বলে মনে করে। কারণ হলো তারা এরকম একটি পরিত্যক্ত বাড়ি দখল করতে পারেনি এই কারণে।

কিন্তু সেই বাড়িতে থাকা উদ্বাস্তুদের এক সময় সরকার থেকে আসে তাদেরকে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দিলে তারা বাড়িটি ছাড়তে অশ্বিকৃতি জানায়। তারা সংকল্পবদ্ধ হয় যে এই বাড়িটি তারা কখনোই ছাড়বে না। এমনি কোন একটা সময় এই বাড়ির এক কোণে থাকা একটি তুলসী গাছ তাদের মধ্যে কারোর চোখে পড়ে। তখন তারা এই তুলসী গাছকে হিন্দুয়ানি বলে উল্লেখ করে এবং সেই গাছটি মূল উৎপাটন করতে মনস্থির করে থাকে।

কিন্তু বাস্তবিক অর্থে তারা সেই কাজটি মূল উৎপাদন করতে পারেনা এবং ভিতরে ভিতরে তারা সেই গাছটির যত্ন নিতে থাকে। কিন্তু সরকারি চাপে একদিন তাদের সবাইকে সেই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয়। সরকার বাড়িটিকে নিয়ে নেয়। আর পড়ে থাকে শুকিয়ে যাওয়া সেই খয়রি রঙের তুলসী গাছটি। মোটামুটি ভাবে এটিই হলো একটি তুলসী গাছের কাহিনী।

এখানে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সেই সময় একটি গাছেরও সাম্প্রদায়িকীকরণ করা হয়েছে এরকম বিষয়গুলি সমাজ থেকে তিনি তুলে ধরেছেন। এবং দেশভাগের যে বিলম্ব না দেশকে ছেড়ে যাওয়া যে বিলম্ব না সেই বিষয়গুলি এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। মানুষকে সমাজকে দেখাতে বা বোঝাতে চেষ্টা করেছেন যে সাম্প্রদায়িকতার ভয় পাওয়াটা কি হতে পারে। তাই আপনারা যারা আজকে আমাদের এখানে একটি তুলসী গাছের কাহিনী সম্পর্কে জানতে এসেছিলেন তারা অবশ্যই বিষয়টি

ভালোভাবে বুঝে নিতে পারবেন বলে মনে করছি। তাই এখনো আমাদের বাংলাদেশের চারপাশে এই তুলসী গাছ প্রচুর পরিমাণে দেখা যায় এবং যেটি আসলে ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যদিও এই গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদটি হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কিন্তু এই গাছের গুরুত্ব আসলে মানবজাতির সকলেরই দেওয়া উচিত। কারণ উদ্ভিদ মানুষের পরম বন্ধু। এ ধরনের যে কোন তথ্য পাওয়ার জন্য আপনারা অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে আমাদের পাশে থাকতে পারেন।

Leave a Comment