১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আজকে আমরা আমাদের প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছি। আপনারা মনোযোগ সহকারে আমাদের এই সম্পূর্ণ প্রবন্ধটি পড়ে নিবেন তাহলে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আপনারা এখান থেকেই পেয়ে যাবেন।
ভাষা আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বর্ণনা করা হচ্ছে:-
পাকিস্তানের সৃষ্টি: ১৯৪৭ সালে যখন পাকিস্তান সৃষ্টি করা হয় ঠিক সেই মুহূর্ত থেকে দুইটি রাষ্ট্রের মধ্যে মানবিক বই সংঘের সৃষ্টি হয়। কেননা দুইটি রাষ্ট্র একটি আলাদা বর্ণের একটি আলাদা জাতির আলাদা আলাদা রাষ্ট্র তারা একভাবে জীবন ধারণ করে। আর আমরা এক ভাবে জীবন ধারণ করতাম অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান হাজার মাইল দূরে থাকার কারণে তাদের মধ্যে মনোমালিন্যের বিষয়টি অনেক জোরালো ভাবে ছিল।
তারা মানবিকভাবে অনেক বৈষম্যের শিকার হতো পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় কম ছিল। আর তাই পশ্চিম পাকিস্তানের দোসরা পূর্ব পাকিস্তানের উপরে অনেকভাবেই শোষণ নিপীড়ন চলাতে থাকে। তারা পুরো পাকিস্তানের ভাষা ও সংস্কৃতির উপর আঘাত দিতে থাকে এরই প্রেক্ষিতে তারা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানায়। কিন্তু বাঙালিরা ভাষা অধিকার কে নিতে চায় তারা আন্দোলনের মাধ্যমে ভাষা অধিকার ফিরিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর হিসেবে সংকল্পবদ্ধ হয়।
পাকিস্তানিদের নির্যাতন:- পাকিস্তানি শ্বশুর গোষ্ঠীর বিভিন্নভাবে বাঙ্গালীদের উপরে নির্যাতন চালাতে থাকে। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এদের প্রতি চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। ১০০ ভাগের মধ্যে ছাপানো ভাগ মানুষেরই মাতৃভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও অফিস আদালতের সকল জায়গাতেই উর্দুকে প্রধান ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয় এমনকি পোস্টকার্ড প্রকৃতির ছোটখাট জিনিসের উর্দু ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
প্রধান ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হতো গণপরিষদে উর্দু এবং ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করা হতো। গণপরিষদের কোনভাবেই বাংলা ভাষা ব্যবহার ছিল না এ থেকে বোঝা যায় যে, তারা কতটা শোচনীয় ভাবে আমাদের উপরে শোষণ নিপীড়ন চালিয়েছে।জিন্নাহর ঘোষণা:- মোহাম্মদ আলী জিন্না ছিলেন সমগ্র পাকিস্তানে প্রথম গভর্নর। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের এবং পশ্চিম পাকিস্তানের গভর্নর ছিলেন।
একদিন তিনি ঢাকায় আসেন এবং সেদিন কথা ছিল যে তিনি রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দেবেন। ভাষণ দিতে ওঠেন তার সামনে ছিল হাজার লক্ষ ছাত্র-জনতা এবং সাধারণ মানুষ তারা অপেক্ষায় ছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কি বলেন এটা শোনার জন্য। মোহাম্মদ আলী জিন্নাত তার ঘোষণার একটি পর্যায়ে বলে ওঠেন Urdu and Urdu shall be the state language of Pakistan.
অর্থাৎ তিনি তার ঘোষণের মধ্যে বলে ওঠেন অন্য কোন ভাষা নয় শুধুমাত্র উর্দু ভাষায় সমগ্র পাকিস্তানে রাষ্ট্রভাষা হবে অন্য কোন ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হবে না। কিন্তু তার এ কথার প্রেক্ষিতে তার বক্তব্য চলাকালীন অবস্থাতেই সমগ্র বাঙালি জাতি ফুলে ফেঁপে ওঠে তারা এক বাক্যে বলে ওঠে না না না এটা কোন হবেই হতে দেওয়া যাবে না উর্দুকে কোন ভাবে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেওয়া হবে না।
বাহান্নোর আন্দোলন:- মোহাম্মদ আলী জিন্নার ঘোষণা করে সমগ্র বাঙালি জাতিদের মধ্যে একটি সংগ্রাম পরিষদ গড়ে ওঠে। তারা দল-মত নির্বিশেষের জাতিভেদ নির্বিশেষে একটি সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলে যার নাম দেওয়া হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা। সংগ্রাম পরিষদ টি ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি গঠন করা হয় আর এই সংগ্রাম পরিষদ ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি একটি আন্দোলনের ডাক দেয় যে আন্দোলনের দিন সমগ্র বাংলাদেশ অর্থাৎ সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের ১৪৪ ধারা জারি করা
হয়েছিল। কিন্তু ছাত্র জনতা সেই ১৪৪ ধারাকে ভঙ্গ করে একটি বিশাল আকার র্যালি বের করেন এবং সেই রেলিতে পুলিশের গুলি হয় সে গুলিতে মারা যান রফিক, সালাম, বরকত সহ নাম না জানা আরো অনেকে। আর এভাবেই আমরা আমাদের বাংলাকে রাষ্ট্রভাষায় হিসেবে পেয়েছি। বাংলা কে আমাদের মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি শুধুমাত্র বাঙালি জাতি নয় বিশ্বের সবগুলো দেশের মানুষ বিশ্বের সবগুলো জাতি এই একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।