আমাদের নিয়মিত পাঠকগণ অনেকদিন থেকেই আমাদেরকে জানাচ্ছেন যে, আমরা যাতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও তাৎপর্য বিশ্লেষণ করি। আজকে আমরা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমি ও তাৎপর্য আপনাদের সামনে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছি।
১৯৪৭ সালে যখন দেশ ভাগ করা হয় তখন এই স্বাধীন বাংলাকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। দুইটি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিভক্ত করে দেয়া হয়। দুইটি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্রকে পাকিস্তান নামে এবং দুটি আলাদা নাম হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের এবং পশ্চিম পাকিস্তান নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়। আর তখন থেকে যত সব ঝামেলার উত্থান হয়। ১৯৪৭ সালের পরে ১৯৪৮ সালের মোঃ আলী জিন্নাহ ভাবে ঘোষণা করে দেন যে সমগ্র পাকিস্তানে অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু উর্দু ছাড়া অন্য কোন ভাষায় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেওয়া হবে না।
তবে সেই সময়ও সংখ্যাগরিষ্ঠের হার ছিল বাংলার প্রতি অর্থাৎ বাংলা ভাষায় বেশি সংখ্যক মানুষ কথা বলতো তবুও তাদের কথার চাপে উদ্যোগে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে তাদের এ দাবি কোন ভাবে গ্রাহ্য করার মত নয় সারা দেশের মানুষ তখন ফুলে ফেটে উঠে এবং তারা একযোগে বলতে থাকে যে কোনোভাবেই উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করা যাবে না। বাংলা ভাষাকে রক্ষা করার জন্য সারা দেশের সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়।
১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারির ঢাকার পল্টন ময়দানে খাজা নাজিমুদ্দিনের কথাই পুনরাবৃত্তি করেন তখন বাঙালি ছাত্র জনতা একুশে ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট আহবান করেন। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করা হয় কিন্তু ছাত্রসমাজকে ১৪৪ ধারা কে ভঙ্গ করে একটি বিশাল মিছিলের আয়োজন করে যেই মিছিলে বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রাণ হারায়।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমি
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যখন উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করে ঠিক তখন থেকেই পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই মুসলিম লীগ সরকার বাঙালি জাতির উপর বিভিন্নভাবে অন্যায় অত্যাচার শুরু করে দেয়। তারা অফিস আদালত সকল ক্ষেত্রেই উর্দুকে প্রধান ভাষা হিসেবে ব্যবহার করতে থাকে এমনকি তারা চিঠির খামেও উর্দু ভাষা ব্যবহার করতে থাকে।
গণপরিষদে ইংরেজি ও উর্দু দুইটি ভাষা ব্যবহার করা হয় কিন্তু কোন গণপরিষদেই বাংলা ভাষায় কোন কার্যক্রম পরিচালিত হয় না। এভাবে চলার কারণে সরকার বাঙ্গালীদের অনুভূতিতে আঘাত হানতে থাকে। ১৯৪৭ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর তৎকালীন তমুদ্দিন মজলিসে প্রথম বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করা হয় কিন্তু সেই দাবি করে দেওয়া হয়।
জিন্নার ঘোষণা: সমগ্র পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর মোহাম্মদ আলী জিন্না ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে এক সময় ঘোষণা করে দেন “Urdu and Urdu Shall be the state language of Pakistan.” অর্থাৎ তিনি বলেন আর অন্য কোন ভাষা নয় একমাত্র উর্দু ভাষায় পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা হতে যাচ্ছে। ঠিক সেই মুহূর্তে তার সামনে উপস্থিত সকল জনতা সকল ছাত্র সকল সাধারণ মানুষ এক কন্ঠে বলে ওঠে না না এটা কোনভাবেই হতে দেওয়া সম্ভব নয়।
আর সেই মুহূর্ত থেকেই বাঙালি জাতির মধ্যে আন্দোলনের খোয়ার জেগে ওঠে এই ঘোষণার প্রতিবাদে ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র জনতা প্রতিবাদ দিবস পালন করে এবং ৩১ জানুয়ারি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। কেননা সমগ্র দেশের মানুষ তখন শুধু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে এবং তারা সর্বশেষ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করে তবেই তারা তাদের রাজপথ ছেড়ে যায়।
এভাবেই আমরা আমাদের বাংলাকে রাষ্ট্রভাষায় হিসেবে পেয়েছি এভাবেই আমরা আমাদের ভাষাকে নিজের ভাষা অর্থাৎ মাতৃভাষাকে নিজের আপন ভাষা হিসেবে গ্রহণ করতে এতটা কষ্ট করতে হয়েছে। আমরা কোনভাবেই এই পটভূমিকে ভুলে যেতে পারি না আমরা কোনভাবেই এই দিনকে ভুলে যেতে পারি না। আমরা প্রতি মুহূর্তেই আমাদের স্বাধীন বাংলাকে ভালোবাসবো এবং যারা এই বাংলাকে পেতে সহায়তা করেছে যারা তাদের জীবন দিয়ে আমাদের বাংলাকে আমাদের করে পাঠিয়েছে তাদেরকে আমরা কখনো ভুলে যাবো না।