কুটির শিল্প বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তির পথে। আগে গ্রামের মানুষের অর্থনীতিতে সাহায্য করতে কুটির শিল্পের ব্যাপক প্রভাব ছিল। কিন্তু আমাদের এখনকার জেনারেশনের ছেলেমেয়েরা কুটির শিল্প সম্পর্কে সম্পূর্ণ অপরিচিত। আজকে আমরা কুটির শিল্প সম্পর্কে অনেক তথ্য জানবো। আলোচনা করব কিভাবে খুঁটির শিল্পের সম্প্রসারণ ঘটানো যায়। এবং আরো আলোচনা করব যে বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনে কঠিন শিল্পের প্রভাব কতখানি। তাহলে চলুন আজকের আলোচনা শুরু করা যাক।
কুটির শিল্প সম্পর্কে আজকে আমরা একটা অনুচ্ছেদ তৈরি করা শিখব। কুটির শিল্প সম্পর্কে যদি আমাদের অনুচ্ছেদ লিখতে বলা হয় তাহলে সবার প্রথমে আমাদের যেটা জানতে হবে সেটা হলো, কুটির শিল্প কি?
কুটির শিল্প কাকে বলে?সহজ ভাষায় বলতে গেলে পারিশ্রমিক দিয়ে রাখা শ্রমিক ছাড়াই নিজের কাজ করে অর্থাৎ নিজে এবং পরিবারের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে স্বল্প পরিসরে ছোটখাটো জিনিস তৈরি করে বিক্রি করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করাই হলো কুটির শিল্প।
পারিবারিক শ্রমিক দ্বারা ঘরে বসে কোনরকমের বিদ্যুৎ ও ভারী যন্ত্রপাতির সাহায্য ছাড়াই হাতের সাহায্যে কোনো দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করাকে কুটির শিল্প বলা হয়। অর্থাৎ, কোনো ব্যাক্তি যদি ঘরে বসে ছোটখাটো কোনো যন্ত্রপাতি অথবা হাতের সাহায্যে কোনো দ্রব্যসামগ্রী তৈরি করে । যেমন মাটির হাড়ি পাতিল তৈরি করা।
মাটির পুতুল বানানো
বিভিন্ন ধরনের প্যাকেট তৈরি করা।
ঘর সাজানোর জিনিসপত্র তৈরি করা।
কাগজের ফুল তৈরি করা।
বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের ছোট ছোট খেলনা তৈরি করা।
দর্জি অর্থাৎ পোশাক পরিচ্ছন্ন তৈরি করা।
নকশি কাঁথা সেলাই করা।
বাঁশ এবং বেদ দিয়ে গৃহ সামগ্রী তৈরি করা।
পাট দিয়ে বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করা।
ইত্যাদি এইসব ঘরে বসে পরিবারের সদস্যদের সাহায্যে তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে কিছু অর্থ উপার্জন করা যায়। আশেপাশের মানুষের প্রয়োজন মেটানো যায় এবং আর্থিকভাবে সচ্ছলতা ফিরে আসে। আগেকার দিনের গ্রামীণ জীবনের মানুষজন তাদের অবসর সময় এইসব কুটির শিল্প তৈরি করত। কিন্তু এখন ইন্টারনেট এবং নগরায়নের ফলে মানুষ হয়ে গেছে অলস। মানুষ তার মূল্যবান সময়গুলো মোবাইল এবং বিভিন্ন ধরনের গ্যাজেটের পেছনে নষ্ট করেন। এজন্য বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের দেশ।
বাংলাদেশে আগে প্রতি ঘরে ঘরে কুটির শিল্প ছিল। তখনকার মানুষের ছিল না কোন অভাব, ছিল না কোন হাহাকার। আপন মানুষ সুস্থ সবল জীবন যাপন করত। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস নিজে তৈরি করত এবং অন্যদের প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করতো। এভাবে তারা অর্থনৈতিকভাবে ও উন্নয়ন করতে পারতো। কিন্তু এখনকার মানুষ অলস হয়ে গেছে এজন্য বিলুপ্তি ঘটছে এই সকল কুটির শিল্পের।
এদেশে কয়েকটি নির্দিষ্ট কুটিরশিল্প রয়েছে। যেমন- পাটের দ্রব্যসামগ্রী প্রস্তুত, হস্তচালিত তাঁতের সুতিবস্ত্র তৈরি, বাঁশ-বেতের চেয়ার, মাটির হাঁড়ি-পাতিল, টেবিল তৈরি ইত্যাদি, যা বৃহদায়তন শিল্পে বহুল পরিমাণে উৎপাদনের সুবিধা নেই। কুটিরশিল্প দিন দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই শিল্পকে বাঁচাতে হলে গ্রাম্যশিল্পকে মূলধন জোগাতে হবে, সরবরাহ করতে হবে সস্তায় কাঁচামাল। বাংলাদেশে কুটিরশিল্পের অবস্থা বর্তমানে সংকটাপন্ন হলেও এখানে কুটিরশিল্প টিকে থাকার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
অনেক উন্নত দেশে বৃহদায়তন শিল্পের পাশাপাশি যদি কুটিরশিল্পের অস্তিত্ব সগৌরবে বর্তমান থাকতে পারে, তবে বাংলাদেশেও তা সম্ভবপর। কুটিরশিল্প আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণ হলাে এই শিল্প। এর মাধ্যমে বেকারত্ব ঘােচানাে এবং দারিদ্র্য বিমােচনও সম্ভব। এসব চিন্তা করে কুটিরশিল্পের পুনরুজ্জীবন ও প্রসার ঘটানাে প্রয়ােজন।আমাদের বাংলাদেশের যদি সবাই কুটির শিল্পের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তাহলে কিন্তু দূর হতে পারে অনেক বেকারত্বের সমস্যা।
আমাদের হারিয়ে যাওয়া সেই সোনালী বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে, আমাদের পরিশ্রমী হতে হবে।অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে যদি আমরা কিছু করার চেষ্টা করি তাহলে কিন্তু নিজের পাশাপাশি আমরা অন্যকেও সাহায্য করতে পারব। স্বল্প প্রচেষ্টায় আমরা ছোটখাট ব্যবসা শুরু করতে পারি। আপনার মাঝে যদি প্রতিভা থাকে তাহলে আপনিও কুটির শিল্প নিয়ে নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করতে পারবেন। আপনার প্রচেষ্টায় আপনি নিজের ক্যারিয়ারের পাশাপাশি আরো অনেক বেকার ছেলে মেয়েদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবেন। কুটির শিল্পের উপর গুরুত্ব আরোপ করলে দেশে অনেক কর্মসংস্থান তৈরি হবে।