কুকুর কামড়ালে অবশ্যই নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে টিকা গ্রহণ করবেন। আগে কুকুর কামড়ালে সাতটা টিকা দিতে হতো নাভিতে। কিন্তু এখন তিনটা টাকা দিতে হয়। তিনটা টিকা বাহুতে দেওয়া হয়। আপনাকে যদি কুকুর কামড়ায় তাহলে সেই দিন হতে তিন দিনের মাথায় টিকা নিলে ভালো হয়। তিন দিনের মধ্যে যদি আপনি অসুস্থ হয়ে না পারেন তাহলে এক সপ্তাহ
পর টিকা নিলেও কোন সমস্যা হবে না। কিছুদিন দেরি হলেও টিকা কিন্তু অবশ্যই নিতে হবে। না হলে পরবর্তীতে মারাত্মক জলাত্মক রোগ হতে পারে। তাই যাদের কুকুর কামড়েছে কিন্তু তৎক্ষণাৎ অসুস্থ হননি তারা নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকবেন না। এখন কোন সমস্যা দেখা না দিলেও পরবর্তীতে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কুকুর কামড়ানোর টিকা নিয়ে ফেলুন।
আজকে আমাদের এই আলোচনায় আমরা কুকুর কামড়ানোর ভয়াবহতা সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। এবং আপনাকে যদি কুকুর অথবা বিড়াল কামড়ে থাকে তাহলে আপনার কি করনীয় সেগুলো সব কিছুই জানতে পারবেন আজকে আমাদের এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে।
শুরুতেই আক্রান্ত স্থানে ক্ষত ও রক্তপাতের তীব্রতা খেয়াল করতে হবে। কুকুরে কামড়ালে প্রথমে ক্ষতস্থান চেপে ধরুন, যেন তাড়াতাড়ি রক্তপাত বন্ধ হয়। এরপর টিউবয়েল বা কলের পানি দিয়ে প্রবহমান পানির ধারার নিচে ন্যূনতম দশ মিনিট ধরে ক্ষত পরিষ্কার করুন। সম্ভব হলে কোনো অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করতে পারেন ক্ষতটি ভালোভাবে পরিষ্কারের জন্য। এটি ক্ষতের ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু পরিষ্কার করতে সাহায্য করবে।
যতটা সম্ভব আক্রান্ত স্থানকে উঁচু করে রাখার চেষ্টা করুন।ক্ষত পরিষ্কার হয়ে গেলে দেরি না করে ক্ষতপরবর্তী সংক্রমণের হার কমানোর জন্য নিকটস্থ চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে ক্ষতস্থানে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক অয়েনমেন্টের প্রলেপ প্রয়োগ করে একটি জীবাণুমুক্ত গজ কাপড় দিয়ে ব্যান্ডেজ করে ফেলুন। প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পথ্যের পাশাপাশি অবশ্যই প্রতিদিন কামড়ের ক্ষতস্থান পরিষ্কার করতে হবে। ধুলো-বালি ও ময়লা যেন না লাগে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। ক্ষতপ্রদাহ শুকিয়ে আসা অবধি এ নিয়ম মেনে চলা উচিত।
যদি ক্ষতস্থানে অনেক বেশি ব্যথা হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্যারাসিটামল বা অন্য ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করতে পারেন। খালি হাতে কখনোই ক্ষতস্থান স্পর্শ করবেন না। ক্ষতস্থানে কোনো তেল, মাটি, গাছের রস, পানের পাতা, গোবর, চকের গুঁড়া ইত্যাদি কোনো প্রকার অপদ্রব্য প্রয়োগ করা যাবে না। ক্ষতস্থানে কোনো সেলাই দেবেন না এবং ক্ষতে চিনি, লবণ বা কোনো ক্ষারক পদার্থ ব্যবহার না করাই ভালো
রাস্তায় হঠাৎ কুকুর আক্রমণ করলে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কুকুর কাউকে আঁচড় বা কামড় দিলে অধিকাংশই শুধু জলাতঙ্কের কথা চিন্তা করে ভীত হন। কিন্তু জলাতঙ্কই নয়, ধনুষ্টংকারসহ বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রামক রোগও ছড়াতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে জলাতঙ্ক যেমন প্রাণসংশয়ের কারণ হতে পারে, তেমনই আক্রান্ত স্থানে বিবিধ সংক্রমণ ছড়িয়ে সমস্যাকে আরও জটিল করতে পারে। তাছাড়া কুকুরের কামড় বেশ যন্ত্রণাদায়কও।
দেশে কুকুরের আক্রমণের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে আগস্ট থেকে নভেম্বর মাসে। রাস্তাঘাটে কুকুরের আক্রমণের শিকার হলে ভীত না হয়ে কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপ নিন। এসময় জরুরি কিছু বিষয় মাথায় রাখবেন। উপরে উল্লেখিত পদক্ষেপগুলো যদি আপনি প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে গ্রহণ করেন তাহলে আপনার ঝুঁকি অনেক অংশে কমে যাবে।
কুকুরের আঁচড় বা কামড়ের পরে দেরি না করে নিকটস্থ হাসপাতাল বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে জলাতঙ্ক ও ধনুষ্টংকারের টিকা গ্রহণ করা উচিত। জলাতঙ্কের রোগলক্ষণ প্রকাশ পেলে তা কিন্তু শতভাগ প্রাণঘাতী। এ রোগ একবার হলে মৃত্যু অনিবার্য। সাধারণত লক্ষণ দেখা দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই রোগী মৃত্যুবরণ করে। কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে না।
কেবল উপশমমূলক চিকিৎসাই দেওয়া সম্ভব। কুকুরের কামড়ের পর জলাতঙ্কের লক্ষণ প্রকাশ পেতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।কারো কারো ক্ষেত্রে কয়েক বছর পর হলেও কিন্তু কুকুর কামড়ানোর ভয়াবহতা প্রকাশ পাইতে পারে। তাই আপনাদের যদি তৎক্ষণাৎ কোন শারীরিক সমস্যা না হয়ে থাকে তবুও অবশ্যই টিকা নিতেই হবে।