দাদ একটি চর্মরোগ। আমরা কমবেশি সবাই এই চর্মরোগটির সাথে পরিচিত। এটি এক ধরনের চুলকানি জাতীয় চর্ম রোগ। দাদ হলে সহজে ভালো হয় না। যে স্থানে দাদ হয় ছোট আকার ধারণ করতে করতে বড় আকার ধারণ করে ফেলে। দাঁত এক ধরনের ছোঁয়াচে চর্ম রোগ। সাধারণত শরীরের যেই অঙ্গগুলো ঢাকা থাকে এবং শরীরের যে অঙ্গে বেশি ঘাম হয় সেখানে দাদ হওয়া সম্ভাবনা বেশি থাকে। ঘামের দুর্গন্ধ এবং জীবাণু থেকে এ ধরনের চর্ম রোগের সৃষ্টি হয়। তাই এ ধরনের চর্মরোগ থেকে বাঁচতে নিজের শরীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
দাদের প্রধান উপসর্গ হলো ফুসকুড়ি বা র্যাশ। এই র্যাশ দেখতে সাধারণত আংটির মতো গোল হয়ে থাকে। রঙ হয় লালচে। তবে রোগীর ত্বকের বর্ণভেদে এটি রূপালি দেখাতে পারে। আবার আশেপাশের ত্বকের চেয়ে গাঢ় বর্ণও ধারণ করতে পারে।আমাদের শরীরের যেকোনো অংশে দাদ দেখা দিতে পারে। যেমন: কুঁচকি, মাথার ত্বক, হাত, পা, পায়ের পাতা, এমনকি হাত-পায়ের নখ। আক্রান্ত স্থানভেদে দাদের লক্ষণেও ভিন্নতা আসতে পারে। যেমন, র্যাশের আকারে ভিন্নতা থাকতে পারে। দাদের র্যাশ আস্তে আস্তে বড় হয়ে ছড়িয়ে যেতে পারে। আবার কখনো কখনো একাধিক র্যাশ দেখা দিতে পারে।
মাথার ত্বকে দাদ দেখা দিলে সাধারণত আক্রান্ত অংশের চুল পড়ে টাক সৃষ্টি হয়। টাক পড়া অংশে লালচে, গোলাকার ও ছোটো ছোটো আঁইশযুক্ত র্যাশ তৈরি হয়। এতে চুলকানি থাকতে পারে।ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়লে টাক পড়া অংশের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে এবং মাথার ত্বকে দাদ রোগের একাধিক র্যাশ তৈরি হতে পারে।
মাথার ত্বকের দাদ রোগ প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
এক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানটি লাল হয়ে ফুলে ওঠে এবং সেখান থেকে চামড়া উঠে যেতে থাকে। সেই সাথে পায়ের আঙ্গুলগুলোর ফাঁকে ফাঁকে চুলকানি হয়। বিশেষ করে পায়ের সবচেয়ে ছোটো আঙুল দুটির মাঝখানের অংশে চুলকানি হয়ে থাকে।গাল, চিবুক ও গলার ওপরের অংশে এই ধরনের দাদ দেখা দেয়। এটিও লাল লাল র্যাশ হিসেবে দেখা যায়, যাতে আঁইশ থাকে এবং চুলকানি হয়। দাঁড়িতে দাদ হলে অনেক সময় র্যাশের ওপরে চলটা পড়ে। আবার ভেতরে পুঁজও জমতে পারে। একই সাথে আক্রান্ত অংশের চুল পড়ে যেতে পারে।দাদ রোগে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। তবে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে দাদ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই দাদ রোগের ঝুঁকি কমাতে সেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়।
নিচের তালিকায় দাদ রোগ প্রতিরোধের উপায়গুলো তুলে ধরা হয়েছে—
অপরিষ্কার শরীরে থাকে জীবাণু। আর অপরিচ্ছন্ন, স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে দাদ রোগের জীবাণু থাকার সম্ভাবনা বেশি। এজন্য ত্বক সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও শুষ্ক রাখুন।
হাতের এবং পায়ের নখ ছোটো ও পরিষ্কার রাখুন।
দিনে অন্তত একবার মোজা ও অন্তর্বাস পরিবর্তন করুন।
স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে দাদ রোগের ঝুঁকি বেশি। তাই জিম কিংবা চেঞ্জিং রুম ও পাবলিক গোসলখানা এর মতো স্থানে খালি পায়ে হাঁটা থেকে বিরত থাকা উচিত।
আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য জিনিস ব্যবহার করলেও দাদ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তাই দাদ আছে এমন কারও সাথে পোশাক, তোয়ালে, চাদর বা অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিস শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।দাদ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির অথবা প্রাণীর সংস্পর্শে এসে থাকলে, ত্বকে কোনো পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখুন।সঠিক চিকিৎসা না করালে দাদ সেরে না উঠে বরং শরীরের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে যেতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে এমনটা হওয়ার ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
অনেক ক্ষেত্রে দাদ সেরে যাওয়ার পরেও ত্বকে দাগ থেকে যায়।আক্রান্ত স্থানটি চুলকানোর ফলে ত্বকে ফাটল সৃষ্টি হতে পারে। এই ফাটল দিয়ে ব্যাকটেরিয়া ঢুকে নতুন ইনফেকশন তৈরি করে দাদকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। তখন ত্বকের আক্রান্ত স্থানটি লাল ও গরম হয়ে যায়, ফুলে ওঠে, ব্যথা হয় এবং পুঁজ বের হয়। দাঁত থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিসেপটিক জাতীয় মলম ব্যবহার করা উচিত। এবং যে স্থানে দাঁত হয়েছে সেই স্থানে অ্যালকোহল জাতীয় জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে।