আমরা সকলেই জানি যে আমার সোনার বাংলা গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে বিবেচিত। প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই গানটি গাওয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু হয়ে থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের সরকারি দিবস অথবা জাতীয় দিবস উপলক্ষে এই গানটি গাওয়ার মধ্য দিয়ে সকল ধরনের অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। জাতীয় সংগীত হিসেবে আমার সোনার বাংলা গানটি কে কেন জাতীয় সংগীত করা হলো সে প্রসঙ্গে অনেকেই জানতে চান বলে এখানে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে এখানে বিস্তারিত আলোচনা আপনাদের প্রশ্নের উত্তর প্রদান করতে পারবে।
প্রথমত আপনারা যদি আমার সোনার বাংলা গানটির লিরিকের দিকে একটু লক্ষ্য করেন তাহলে বুঝতে পারবেন এই লিরিক কতটা শ্রুতি মধুর এবং কতটা দেশাত্মবোধক প্রেম থাকলে তা লেখা সম্ভব হয়েছে। আমাদের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গানটি লেখার মধ্য দিয়ে বঙ্গভঙ্গের বিষয়টা তৎকালীন সময়ে উপস্থাপন করেছিলেন। তাই বঙ্গভঙ্গ সময়কালে এই গানটি রচনা করার ফলে দেশ প্রেমের প্রতি আমাদের যে বিষয়গুলো মনের ভেতরে ছিল তা লিখিত আকারে প্রকাশ পাই।
তবে আপনাদের মনে হতে পারে যে, অন্যান্য দেশাত্মবোধক গানের পরিবর্তে কেন আমার সোনার বাংলা গানকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় সংগীত করা হলো এবং কখন সেটা করা হলো। যদিও ১৯০৫ সালে এই গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক রচিত হয়ে থাকে এবং এই গানে বঙ্গমাতার পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে তারপরও এই গানটি পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে জাতীয় সংগীত হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে এই গানের লিরিক অথবা এই গানে যা বোঝাতে চেয়েছে তা একটা দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রে যথেষ্ট।
তাই সেই দৃষ্টিকোণ থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যদিও এটা ১৯০৫ সালে লিখেছেন তারপরও যখন এই গানটি আপনাদের শোনার প্রয়োজন হবে তখন শুনে নিতে পারলে বুঝতে পারবেন যে গানটি কোন ভিত্তিতে জাতীয় সংগীত করা হয়েছে। আমরা যদি আমার সোনার বাংলা গানটির অর্থটা কিছুটা হলেও বোঝার চেষ্টা করি তাহলে এখানে সোনা অর্থে স্বর্ণ বিষয়কে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আমাদের এই দেশ যে আসলেই স্বর্ণমণ্ডিত এবং এদেশের প্রত্যেকটি স্থান আমাদের কাছে সোনার মতোই মূল্যবান।
আমরা যারা ইতিহাস জানি তাদের কাছে এটা বুঝতে সুবিধা হবে যে স্বাধীন বাংলার কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের এক মার্চ গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পল্টন ময়দানে একটা জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই জনসভা অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ ছিল মার্চ মাসের ৩ তারিখ। আর সেই দিন জনসভা শেষে স্বাধীনতার এই গানটিকে জাতীয় সংগীত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যখন 17 এপ্রিল মুজিবনগর বাংলাদেশ সরকারের শপথ অনুষ্ঠান হয় তখন সেই অনুষ্ঠানে প্রথম জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে এটাকে গাওয়া হয়।
তাই এই গানের কথাগুলো যদি আপনারা একটাবার দেখেন অথবা গাওয়ার চেষ্টা করে থাকেন তাহলে দেখবেন যে খুব সহজেই এই গানটি আপনাদের মনের ভেতরে গেঁথে গিয়েছে। তাছাড়া বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী শ্রোতাদের কাছে এবং সারা বিশ্বের মানুষের কাছে বিবিসি বাংলার তৈরি প্রতিবেদন অনুসরণ করে বাংলা গানের ভিতরে যে সকল গান রয়েছে সে সকল গানের ভেতরে এটার অবস্থান প্রথমে রয়েছে।
তাছাড়া ২০১৪ সালে জাতীয় সংগীত ঢাকার প্যারেড ময়দানে একসঙ্গে দুই লক্ষ ৫৪৫৩৭ জন গাওয়ার মাধ্যমে গিনেস বিশ্ব রেকর্ড করে থাকে। তাছাড়া জীবনভিত্তিক বিভিন্ন ছবিতে অথবা স্বাধীনতা সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের সিনেমাতে এই গান ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই আপনারা যারা এটার উত্তর জানতে চেয়েছিলেন তাদের প্রেক্ষিতেই বলা হচ্ছে যে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে এখানকার এই গানের কথাগুলো আমাদের দেশের প্রত্যেকটি বিষয়কে উপস্থাপন করে থাকে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গানের মধ্য দিয়ে দেশের প্রতি ভালোবাসার যে বিষয়গুলো ফুটে ওঠা উচিত অথবা একজন মানুষের দেশ প্রেমের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মনে রাখা উচিত সেগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন। তাই সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আমার সোনার বাংলা আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গাওয়া হয়।