শরীরের রোগ মুক্তির জন্য মানুষ ঔষধ সেবন করে। ঔষধ সব সময় মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে। কিন্তু অত্যাবশ্যকীয় এই ঔষধ কিন্তু মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। যে কোন ঔষধের ওভারডোজ মানুষের মৃত্যুর কারণ।
রোগ প্রতিরোধ-প্রতিকারে আমরা ওষুধ ব্যবহার করি। সঠিক সময় সঠিক মাত্রায় সঠিক ওষুধটি প্রয়োগ করলে আমরা অল্প ওষুধেই সুফল পেয়ে থাকি ও সুস্থ হয়ে উঠি। ওষুধের রোগ সারানোর অপূর্ব ক্ষমতাকে আমরা শুধু ধর্তব্যের মধ্যে নিয়ে থাকি। কিন্তু রোগ সারানোর পাশাপাশি ওষুধ যে আমাদের শরীরে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, তা আমরা জানি না বা মনে রাখি না।
কোনো কোনো সময় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বিষক্রিয়া বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে এবং এর ফলে মানুষ মারাও যেতে পারে। এ বিপজ্জনক পরিস্থিতির উদ্ভব হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে। মনে রাখা উচিত, ওষুধ সাধারণ ভোগ্যপণ্যের মতো কোনো পণ্য নয়। ওষুধ দেয়া বা নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন অত্যাবশ্যকীয় পূর্বশর্ত। উন্নত বিশ্বে ওষুধ ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।
কেউ ওষুধের দোকান থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া যে কোনো ওষুধ কিনতে পারে না। আমাদের দেশে ওষুধ ক্রয়-বিক্রয়ে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এ কারণে মানুষ প্রেসক্রিপশন ছাড়াই যে কোনো পরিমাণে সবরকম ওষুধ কিনতে পারে। ওষুধের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ সম্পর্কে কোনো ওষুধ প্রদান ও ব্যবহারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্টের সুস্পষ্ট পরামর্শ থাকা বাধ্যতামূলক। নয়তো ওষুধ গ্রহণ বিপজ্জনক হতে পারে।
ওষুধ শরীরের জন্য বহিরাগত একটি রাসায়নিক পদার্থ এবং প্রতিটি বহিরাগত রাসায়নিক পদার্থেরই শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়াসহ বিষক্রিয়া থাকা স্বাভাবিক। ওষুধের যুক্তিসঙ্গত প্রয়োগের মাধ্যমে এ ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো যথাসম্ভব ন্যূনতম রেখে রোগীকে সর্বোচ্চ মাত্রায় সুফল প্রদানের প্রচেষ্টাই চিকিৎসাবিজ্ঞানের আসল লক্ষ্য।
স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিটি পদক্ষেপ আমাদের সচেতন ভাবে নিতে হবে। অনেক সময় অসচেতনতার কারণে কিন্তু রোগীর মৃত্যু হতে পারে। অতিরিক্ত ঘুমের ঔষধ খেলে মৃত্যু হতে পারে। এবং অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় বেশি পাওয়ারফুল ঔষধ খেলেও কিন্তু অনেক সময় রোগীর মৃত্যু হয়। একজন সাধারন মানুষ যদি ১০ থেকে ১৫ টি ঘুমের ওষুধ একসঙ্গে খায় তাহলে সেই মানুষের মৃত্যু অনিবার্য।
অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ সেবন করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এন্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করার বিভিন্ন নিয়ম আছে। এই ওষুধের নির্দিষ্ট একটা কোর্স থাকে। সেই কোর্স অনুযায়ী ঔষধ সেবন না করলে অনেক সময় শারীরিক ক্ষতি হতে পারে এবং অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করাতে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার বা যথেচ্ছ ব্যবহার আমাদের প্রতিনিয়তই অন্য একধরনের ভয়ংকর বিপদ ও ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গত সাত দশক ধরে অ্যান্টিবায়োটিককে সংক্রামক রোগের প্রতিকারে ম্যাজিক বুলেট হিসেবে গণ্য করে আসা হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পর থেকে একদিকে যেমন লক্ষ-কোটি লোকের জীবন রক্ষা করা গেছে, তেমনি এসব ওষুধের বিষক্রিয়া, বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও অপপ্রয়োগের ফলে ভোগান্তি ছাড়াও অনেক লোককে জীবন দিতে হয়েছে। সংক্রামক রোগের চিকিৎসা শুরুর আগে চিকিৎসককে জীবাণুতত্ত্বীয় পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করতে হয় রোগী কোন জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত এবং সেই জীবাণু বা জীবাণুগুলো কোন কোন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি বেশি সংবেদনশীল।
এ ধরনের পরীক্ষা সম্পন্ন না করেই যত্রতত্র যখন-তখন বিভিন্ন মাত্রায় যুক্তিহীন অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে অনেক জীবাণু ইতিমধ্যে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা রোধ বা ধ্বংস করে সফল চ্যালেঞ্জার হিসেবে টিকে থাকার দক্ষতা ও ক্ষমতা অর্জন করেছে। জীবাণুর এই প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন এ শতাব্দীর চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পর্যাপ্তসংখ্যক নতুন নতুন কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কৃত না হলে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মানবসভ্যতাকে সমূহ বিপদের সম্মুখীন হতে হবে।
তাহলে প্রিয় বন্ধুগণ আমরা আমাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হব। এবং অন্যকে সচেতন করে তুলব। এখনো ঔষধ সেবন করার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী নিয়ম করে ঔষধ খেতে হবে। অতিরিক্ত ঔষধ খেলে এবং ঔষধের ওভারডোস কিন্তু রোগীর মৃত্যুর কারণ। আমরা এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে সচেতন হবো এবং অন্য কেউ সচেতন করে তুলবো।