ইগো এমন একটা জিনিস যেটার কারণে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই তিলে তিলে গড়ে তোলা আপনার সম্পর্ক যাতে নষ্ট না হয় তার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই ইগো বিষয়টা মেনে চলতে হবে এবং সেটাকে কন্ট্রোল করতে হবে। আর এই ক্ষেত্রে ইগো নিয়ে যে সকল উক্তি রয়েছে তা যদি আপনারা পড়তে পারেন তাহলে এটা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় অথবা ইগো কিভাবে একটা মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে তা এখানে জানিয়ে দেওয়া হবে। বিভিন্ন মনীষী যখন ইগো নিয়ে কথা বলে গিয়েছেন তখন সেগুলো যদি আমরা পড়ি অথবা মেনে চলার চেষ্টা করি তাহলে জীবনে বিভিন্ন ধরনের ঘাত প্রতিঘাতের সৃষ্টি হবে না।
আপনারা অনেকেই ইগোকে আত্মসম্মানবোধ বলে মনে করে থাকেন। তবে ইগো বিষয়টা আলাদা এবং আত্মসম্মানবোধ বিষয়টা আলাদা। তবে যারা ইগো নিয়ে চলতে চান অথবা যারা কোন সামান্য ভুল হয়ে থাকলেই অতিরিক্ত পরিমাণিকও দেখেন তাদের এ সকল বিষয়ে আত্মসম্মানবোধের মধ্যে পড়ে না। দিনের পর দিন যাদেরকে আপনি পাত্তা দিচ্ছেন এবং যারা আপনাকে পাত্তা দেওয়ার কথা ভাবছেও না তাদের ক্ষেত্রে আপনি আত্মসম্মানবোধের সঙ্গে সকল ধরনের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করতে পারেন।
কারণ যেখানে সম্মান নেই অথবা আপনার তদারকির মূল্য নেই সেখানে না থাকাটাই সবচাইতে ভালো। ইগো বিষয়টাকে আপনারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাবে দেখে থাকেন এবং অনেকে আছেন যারা অল্প কিছুতেই খুব বেশি রাগ দেখিয়ে দিনের পর দিন কথা না বলে কাটিয়ে দেন। কিন্তু এ পৃথিবীর সম্পর্কে আপনাকে বুঝতে হবে নিজের আত্মসম্মানবোধ সম্পর্কে। আপনি যখন নিজের আত্মসম্মান বোধের ব্যাপারে সচেতন হবেন এবং কেউ যদি আপনাকে অসম্মান করে কোন কিছু বলছে বলে ভাবলেন তখন সেখান থেকে সবচাইতে ভালো হয় দূরে সরে চলে যাওয়া।
কারণ আপনি যদি সেখান থেকে অসম্মান পেতে থাকেন তাহলে দেখা যাবে যে প্রথমবার অসম্মান পাওয়ার পরও যদি অবস্থান করেন তাহলে পরবর্তীতে আরও বেশি অসম্মানিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই নিজের মান সম্মান যদি নিজে ধরে রাখতে চান এবং নিজে যদি নিজেকে সম্মান করেন তাহলে অবশ্যই ওই সকল স্থান থেকে আপনাকে দূরে সরে চলে আসতে হবে। আর কোন স্থানে যদি দেখেন আপনাকে কোন কারনে খারাপ ব্যবহার সহ্য করতে হচ্ছে এবং পরবর্তীতে সেই ব্যাক্তি আবার ক্ষমা চেয়ে আবার পরবর্তীতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করছে তখন অবশ্যই আপনার ইগো প্রাধান্য দিতে হবে।
কারণ কেউ একজন আপনাকে বারবার অপমান করবে এবং আপনি সেখানে বেহায়ার মত থাকবেন তাহলে নিজের আত্মসম্মানবোধ যেমন হারাবেন তেমনি ভাবে নিজের মান সম্মান সেখানে কখনোই থাকবে না। তাই ইগো নিয়ে যে সকল উক্তি রয়েছে সেগুলো আপনারা অবশ্যই পড়ে দেখবেন এবং যারা কথায় কথায় অতিরিক্ত পরিমাণে ইগো দেখায় তারাও যদি এটা পড়ে তাহলে নিজেদেরকে সংশোধন করতে পারবে। কারণ কিছু কিছু সম্পর্ক রয়েছে যেখানে অল্প ইগো দেখালেই আপনি হয়তো নিজেকে ভালো রাখতে পারবেন কিন্তু সেই সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার পথে চলে যাবে।
যদি নিজের প্রতি অতিরিক্ত আত্মসম্মানবোধ দেখান এবং সেখান থেকে যদি আপনি ইগো কে প্রাধান্য দেন তাহলে দেখা যাবে যে সেই সম্পর্কের কোন অর্থ থাকবে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইগো না দেখানো ভালো এবং যেখান থেকে আপনার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে সেখান থেকে আপনার উপরে অনেক রকমের চাপ আসতে পারে। আর যদি মনে করেন সেটা আপনার অত্যন্ত প্রয়োজন এবং সেখানে থেকে আপনার আত্মসম্মান বোধের বিষয়গুলো উঠছে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব তা ছেড়ে দিতে হবে।
০১. “ইগো যদি কারও বাহন হয়, তবে সে কোথাও পৌঁছতে পারবে না”
– রবার্ট হ্যাল্ফ (আমেরিকান উদ্যোক্তা)
০২. “ইগো হল বোকাদের বোকা হওয়ার যন্ত্রণা লুকানোর উপায়”
– ড. হারবার্ট স্কোফিল্ড (১৯ শতকের ইংলিশ স্কলার ও শিক্ষক)
০৩. “তুমি যখন তোমার ইগোকে চিনতে পারবে, তখন বুঝবে এটা আসলে তোমার মনের ভেতরে সৃষ্টি হওয়া কিছু অর্থহীন কথা”
– ইকহার্ট টলি (কানাডিয়ান বেস্ট সেলিং লেখক)
০৪. “ইগো মানুষকে অচেতন করে রাখে। চেতনা আর ইগো কখনও একসাথে থাকতে পারে না”
– ইকহার্ড টলি
০৫. “ইগো মানুষের নিজেকে নিজে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাকে নি:শব্দে নষ্ট করে ফেলে”
– কলিন হাইটাওয়ার (আমেরিকান লেখক)
০৬. “ইগো মানুষের সুবুদ্ধির পথে অন্যতম বাধা”
– মারিয়ান মুর (আমেরিকান কবি)
০৭. “সত্যিকার বড় হতে চাইলে ইগোকে বন্দী করে রাখো…”
– মেরি রবার্টস রিনহার্ট (বিখ্যাত লেখিকা)
০৮. “ইগোইস্ট মানে এমন একজন মানুষ যে অন্য সবাইকে ছোট করে দেখে”
০৯. “একজন মানুষের ইগো ভাঙার মূহুর্তের চেয়ে ভালো মূহুর্ত আর একটিও নেই”
– ববি ফিশার (সর্বকালের সেরা দাবা খেলোয়াড়)
১০. “ইগোর মৃত্যু মানে আত্মার জাগরণ”
– মহাত্মা গান্ধী
১১. “ইগো হলো চোখে জমে থাকা ধুলোর মত। চোখের ধুলো পরিস্কার না হলে যেমন কিছু দেখা যায় না; তেমনি ইগো দূর না হলে সত্যিকার জগতকে দেখা যায় না”
– সংগৃহীত
১২. “ইগো সত্যিকার জ্ঞানী হওয়ার পথে একটি প্রধান বাধা”
– ড্যানিয়েল লা-পোর্ত (কানাডিয়ান বেস্ট সেলিং লেখিকা)
১৩. “যাদের ইগো বড়, তাদের জানার ক্ষমতা ছোট”
– রবার্ট স্কুলার (আমেরিকান ধর্মীয় বক্তা ও লেখক)
১৪. “বড় চিন্তা সব সময়ে হৃদয় থেকে আসে, ইগো থেকে এটা আসা সম্ভব নয়”
– সংগৃহীত
১৫. “তোমার ইগো কখনওই সত্যিকার তোমাকে ধারণ করে না। এটা একটা মুখোশ, একটা অভিনয়। এটা সব সময়ে অন্যের প্রশংসার ওপর নির্ভর করে। এটা সব নিজেকে শক্তিশালী ভাবতে চায় – কারণ সে সব সময়ে পরাজয়ের ভয় করে”
– রাম দাস (ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও লেখক)
১৬. “ইগোহীন আত্মবিশ্বাসই সত্যিকার আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাসের সাথে ইগো মিশে থাকলে, তা কখনওই খাঁটি আত্মবিশ্বাস নয়”
– সংগৃহীত
১৭. “অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা ইগোর সবচেয়ে বড় একটি অস্ত্র। এটা না হলে সে নিজেকে শক্তিশালী করতে পারে না”
– ইকহার্ট টলি (কানাডিয়ান লেখক)
১৮. “যার জ্ঞান যত বেশি, তার ইগো তত কম। জ্ঞান কম, মানে ইগো বেশি”
– আলবার্ট আইনস্টাইন
১৯. “প্রতিভাকে খুন করা হল ইগোর সবচেয়ে বড় শক্তি”
– সংগৃহীত
২০. “যে কোনও বড় অর্জনের পথে ইগো হল সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা”
– রিচার্ড রোস (কবি ও দার্শনিক)
বাস্তবিক জীবনে আপনারা যদি পারেন তাহলে অবশ্যই নিজের আত্মসম্মানবো ধরে রাখার চেষ্টা করবেন। তবে আত্মসম্মানবোধের নামে যদি ইগো বেশি হয়ে থাকে তাহলে দেখা যাবে যে প্রত্যেকটা কাজের ক্ষেত্রে অথবা প্রত্যেকটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে তা নষ্ট হওয়ার পথে চলে যাবে। আমরা আপনাদের জন্য যে ইগো নিয়ে উক্তি প্রদান করলাম সেগুলো যদি পড়ে দেখতে পারেন তাহলে আশা করি আপনাদের ভেতরে অনেক পরিবর্তন আসবে।