প্রকৃতপক্ষে আল্লাহপাক আমাদের জন্য যে সকল রহমত দিয়ে রেখেছেন তা আমরা জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে উপভোগ করছি। কিন্তু বান্দার ভেতরে উপলব্ধি জ্ঞান খুবই কম থাকার কারণে তা বুঝতে পারে না এবং তার জন্য শোকর গোজার করতে পারে না। তাই আল্লাহর যদি প্রিয় বান্দা হতে চান তাহলে তাঁর রহমত নিয়ে অবশ্যই প্রশংসা করতে হবে এবং জীবনের যে পরিস্থিতিতে থাকুন না কেন আলহামদুলিল্লাহ জ্ঞাপন করতে হবে। আমরা আপনাদের উদ্দেশ্যে এখানে আল্লাহ পাকের রহমত নিয়ে বেশ কিছু উক্তি প্রদান করব যেটার মাধ্যমে উপলব্ধি করতে পারবেন আসলে আল্লাহ পাক আমাদের জীবনে কত রকমের রহমত দিয়েছেন।
এই পৃথিবীর বুকে মহান আল্লাহ পাক আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমরা এই পৃথিবীর বুকে খুব সুন্দর ভাবে নিজের জীবনকে পরিচালনা করতে পারছি। যাদের উসিলায় আমাদের জীবন সুন্দর হয়ে উঠছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার পাশাপাশি যে রব আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর প্রতি অবশ্যই আমাদেরকে আনুগত্য প্রকাশ করতে হবে। কিন্তু আমরা দুনিয়াবী জীবনে যে পরিমাণে মত্ত হয়ে থাকি তাতে করে আল্লাহর রহমতের কথা ভুলে যাই।
খুব সহজ একটা উদাহরণ যদি প্রদান করি তাহলে একটা মানুষ দৈনন্দিন জীবনে বেঁচে থাকার জন্য ৫৫০ লিটার অক্সিজেন সম্পূর্ণ প্রকৃতি থেকে গ্রহণ করতে পারে। এই প্রকৃতি হচ্ছে আল্লাহর দান এবং আল্লাহ পাক অক্সিজেনের যোগান দিচ্ছে বলে একটা মানুষ প্রতিটা সেকেন্ডে অক্সিজেন গ্রহণ করে বেঁচে থাকতে পারছে। আর আপনি যদি এই ৫৫০ লিটার অক্সিজেন কোন হাসপাতাল থেকে কিনতে চান তাহলে দেখা যাবে যে তার মূল্য কয়েক লক্ষ টাকা হবে। তাহলে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে যে অক্সিজেনের রহমত আমাদেরকে প্রদান করছে তা আল্লাহ পাক এর রহমত ছাড়া আর কিছু নয়।
এছাড়াও আমাদের রিজিকের ব্যবস্থা আল্লাহপাক করে থাকেন এবং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আহারের ব্যবস্থা তিনি করে থাকেন। ঘরে খাবার না থাকলেও আপনি যদি আল্লাহ পাকের কাছে একান্ত ভাবে খাবার চান তাহলে তিনি কোন না কোন মাধ্যম ব্যবহার করে আপনার ঘরে খাবার পৌঁছে দেবে অথবা খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করবেন। তেমনি ভাবে চলতে ফিরতে অথবা শারীরিক সুস্থতার ক্ষেত্রে আপনি যে সকল নিয়ামত বা রহমত উপভোগ করছেন সেগুলো আল্লাহ পাক আপনাকে দান করছেন বলে আপনি সেগুলো পাচ্ছেন।
রিজিকের সর্বোচ্চ স্তর গুলোর মধ্য দিয়ে আমরা যদি এ বিষয়গুলো আলোচনা করতে চাই তাহলে হবে যে আপনার শারীরিক সুস্থতা সবচাইতে বড় একটা রহমত বা নিয়ামত। এছাড়াও এক জীবনে একজন নেককার স্ত্রী থাকার পাশাপাশি আপনার যদি টাকা পয়সা রোজগার করতে পারেন তাহলে সেগুলো রিজিক্যাল স্তর হিসেবে বিবেচিত হবে। তাই একজন বান্দা যদি আল্লাহ পাকের এই রহমতের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে সকল ধরনের কাজ সুষ্ঠুভাবে পালন করে দোয়া করতে পারে তাহলে আল্লাহ পাক সেই দোয়াগুলো কবুল করে নেন।
যেহেতু আল্লাহ পাক আমাদেরকে এই পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি করে ধৈর্য সহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা গ্রহণ করছেন তেমনিভাবে একটা সময় মৃত্যুবরণের মধ্য দিয়ে আল্লাহ পাকের কাছে আমাদেরকে ফিরে গিয়ে দুনিয়ার জীবনের হিসাব দিতে হবে। তাই আপনারা যারা এখন আল্লাহপাক কে স্মরণ করার কথা ভাবছেন না অথবা আল্লাহ পাকের স্মরণের বিষয়গুলো আপনাদের দুনিয়াবী জীবনের ভোগবিলাসেম মত থাকার কারণে মনে নেই তারা অবশ্যই সঠিক পথে ফিরে আসুন। কারণ আপনি যখন মৃত্যুবরণ করবেন তখন আপনার হিসাবের খাতা খুলে বসলে কেউ আপনাকে কোন নেকি দিয়ে সাহায্য করবে না অথবা কেউ আপনাকে জান্নাতে যাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করবে না।
১/ আপনার দুর্বলতাকে শক্তিতে পরিণত করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলা-ই রাখেন। তাই তাঁর কাছেই প্রার্থনা করুন। -[ড. বিলাল ফিলিপ্স]
২/ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তাঁকে নিরবে ডেকে যাওয়া বান্দাদের হতাশ করেন না। -[ড. বিলাল ফিলিপ্স]
৩/ কখনো কখনো মানুষ আপনাকে বয়কট করবে, দূরে সরিয়ে দিবে, তবে এগুলোকে পার্সোনালি নিয়ে ভেঙ্গে পড়বেন না। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা হয়তো ওদের দিক থেকে দূরে সরিয়ে তাঁর নিজের দিকেই আপনাকে ডাকছেন। – [ড. বিলাল ফিলিপ্স]
৪/ কথা বলা যদি রূপা হয় তবে নীরব থাকা হচ্ছে সোনা। – [লুকমান (আ:)]
৫/ আল্লাহর কাছে আপনি প্রার্থনা করা বন্ধ করে দিলে তিনি রাগান্বিত হন। অথচ আদম সন্তানের কাছে কিছু প্রার্থনা করলে সে রেগে যায়। – [ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ)]
৬/ যে বিষয়ে মনে খটকা লাগে সে বিষয়টা যতোটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। – [ড. বিলাল ফিলিপ্স]
৭/ এমন কারো সঙ্গী হোন যে আপনাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। – [ড. বিলাল ফিলিপ্স]
৮/ যদি কেউ আপনার প্রভুর আনুগত্য পছন্দ না করে তবে আপনারও তাকে পছন্দ করার কোন যুক্তি নেই। – [ড. বিলাল ফিলিপ্স]
৯/ যখন পৃথিবীর কেউ আপনাকে বুঝতে চেষ্টা করে না, তখন এতটুকু মনে রাখুন আল্লাহ্ আপনাকে বুঝেন। – [ড. বিলাল ফিলিপ্স]
১০/ নিজেকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে প্রতিটা বিষয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করুন। কেননা আপনার জন্য কোনটি কল্যাণকর তা তিনিই ভালো জানেন। – [ড. বিলাল ফিলিপ্স]
১১/ যখন আপনি কুরআন তিলাওয়াত করেন তখন মনে করবেন আপনি আল্লাহর সাথে কথোপকথন করছেন এবং তিনি সরাসরি আপনাকে বলছেন। – [ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহ)]
১২/ আপনি যদি চান আল্লাহ্ আপনার সবগুলো পছন্দনীয় কাজ গ্রহণ করুন, তাহলে আপনি আল্লাহর পছন্দনীয় কাজগুলোই করতে থাকুন। – [ড. বিলাল ফিলিপ্স]
১৩/ দ্বীন ও দুনিয়া একসাথে অর্জন করতে কুরআন ও সুন্নাহ্ ব্যতীত অন্য কোন পথ নেই। যদিও মনে হবে দুনিয়া অপূর্ণই থেকে যাচ্ছে। – [ড. বিলাল ফিলিপ্স]
১৪/ অন্যকে দাওয়াত দিতে গিয়ে নিজেকে ভুলে যাবেন না। কারণ পরিবর্তন নিজেকে দিয়েই শুরু করতে হয়। – [ড. বিলাল ফিলিপ্স]
১৫/ মানুষের খারাপ দিক খোঁজা বন্ধ করুন৷ তাদের ভুলগুলো সহজভাবে গ্রহণ করুন৷ তাদের সাথে ধৈর্যশীল হোন৷ পরিষ্কার একটি হৃদয়ের জন্য সংগ্রাম করুন এবং তাদের ভেতরের ভালটা দেখুন৷ – [শাইখ মুফতি ইসমাইল মেঙ্ক]
১৬/ সর্বশক্তিমান কখনোই ঐ ব্যক্তির ভুল প্রকাশ করবেন না যে মানুষের সম্পর্কে খারাপ কথা বলা থেকে বিরত থাকে। তাই অন্যের পাপ প্রকাশ করা বন্ধ করুন। -[শাইখ মুফতি ইসমাইল মেঙ্ক]
১৭/ আমাদের জীবনে করা বড় ভুল কখনও কখনও আমাদেরকে পরিবর্তন করে দেয় সবচেয়ে ভালো মানুষে। – [শাইখ মুফতি ইসমাইল মেঙ্ক]
১৮/ মাঝে মাঝে দুঃখের দ্বারা আমারা এমনভাবে দগ্ধ হই যে আমারা ভুলেই যাই এমন অনেক বিষয়, যা আমাদের সুখী করতে পারে। কিছু সময় নিয়ে সেগুলো সম্পর্কে চিন্তা করুন। -[শাইখ মুফতি ইসমাইল মেঙ্ক]
১৯/ সন্ত্রাসবাদ কখনোই কোন ধর্মীয় অধিকার নয়। আর ইসলাম সবসময়ই সাধারণ মানুষ হত্যাকে ঘৃণা করে। তাই কেউ চাইলেই এসব হত্যাকান্ডকে ইসলামাইজ করতে পারে না। -[ডা. জাকির নায়িক]
২০/ আপনার পাপগুলো আল্লাহর দয়া থেকে বড় নয়। -[ড. বিলাল ফিলিপ্স]
২১/ আপনি যদি আপনার মূল্য সঠিকভাবে বুঝতেন, তাহলে কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে পাপ কর্মে লিপ্ত হতেন না । – [ড. বিলাল ফিলিপ্স]
২২/ সত্যিকার বন্ধুরাই জান্নাতে (একে অপরের) প্রতিবেশী হতে চায়। – [ড. বিলাল ফিলিপ্স]
২৩/ সে কী পেলো যে আল্লাহকে হারালো ? সে কী হারালো যে আল্লাহকে পেলো? – [ইবনু আতা’আল্লাহ আল ইসকান্দারি (রাহিমাহুল্লাহ)]
২৪/ আপনি যদি ইসলামকে চর্চা না করেন, দয়াকরে ইসলাম সম্পর্কে কিছু বলতে আসবেন না! -[ডা: জাকির নায়িক]
২৫/ যদি শরীর প্রদর্শনই (বেপর্দাই) হয় আধুনিকতা, তাহলে পশুরাই সবচেয়ে বেশি আধুনিক! -[ডা: জাকির নায়িক]
২৬/ নারী-পুরুষের জৈবিক ভালোবাসাকে প্রমোট করতে হয় না। এটা এমনিতেই (সৃষ্টিগতভাবে) প্রমোটেড। এটাকে বরং কন্ট্রোল করতে হয়। – [ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিমাহুল্লাহ)]
২৭/ সেক্যুলাররা যৌনতাকে প্রমোট করে, আর ইসলাম কন্ট্রোল করতে বলে। উভয়টার ফল ও পরিণতি সবার সামনে পরিস্কার। – [শাইখ আহমাদুল্লাহ]
২৮/ লোকের প্রশংসায় আনন্দিত হতে এবং লোকের নিন্দায় দুঃখিত হতে আপনার অন্তরকে প্রশ্রয় দেবেন না। – [ইমাম আবু হামিদ আল-গাজ্জালী (রাহিমাহুল্লাহ)]
২৯/ কখনো কখনো আল্লাহ তা’আলা আমাদের ভোগান্তিতে ফেলেন শুধু এজন্যই যে আমরা যেন তাকে স্মরণ করি। -[ড. বিলাল ফিলিপ্স]
৩০/ আল্লাহকে ভয় করো, কেননা যে তাকে ভয় করে সে কখনো একাকীত্ব অনুভব করে না। – [উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু)]
৩১/ আল্লাহর প্রতি আপনার ভালোবাসা যতই বৃদ্ধি পেতে থাকবে, দুনিয়ার প্রতি আপনার ভালোবাসা ততোই কমতে থাকবে। – [ড. বিলাল ফিলিপ্স]
৩২/ তারা আমাদের ভাই-বোনদের মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখতে চায়, অথচ আমাদের পেছনে রয়েছে বদর, খন্দক, তাবুকের মতো শত শত স্মৃতি। – [কবি আল মাহমুদ]
৩৩/ দুনিয়া অর্জন নয়, দুনিয়া বিমুখীতাতেই রয়েছে দেহ ও মনের প্রশান্তি। – [উমার ইবনুল খাত্তাব (রা)]
৩৪/ সেই ব্যক্তিই অভিশপ্ত যে মরে যায় অথচ তার খারাপ কাজগুলো পৃথিবীতে রয়ে যায়। — [আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু)]
৩৫/ যে বিপদ-আপদ ও মুসিবত আপনাকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দেয়, তা সেই রাহমাতের চাইতে উত্তম যা আপনাকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করে দেয়। -[ ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ)]
৩৬/ যখন তুমি দেখবে, নামাজের মধ্যে তোমার অন্তর উপস্থিত থাকছে না, তখন বুঝে নেবে, এটা ইমানের দূর্বলতার কারণ। কঠোর পরিশ্রম করো নিজের ঈমানকে মজবুত করার জন্য। -[ইমাম ইবনু কুদামাহ আল মাকদিসি (রহ.)]
৩৭/ আসক্তের মতো ভালবাসবেন না, ধ্বংসাত্মকভাবে কাউকে ঘৃণা করবেন না। – [উমার ইবনুল খাত্তাব ( রাঃ)]
৩৮/ এমন দু’টি নিয়ামত আছে, যে দু’টোতে অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তা হচ্ছে, সুস্থতা আর অবসর। – [মুহাম্মাদ (সা)]
৩৯/ পৃথিবীর জীবনটা তিনটি দিনের– গতকালের দিনটিতে যা করা হয়েছে সেগুলো নিয়ে সেটি চলে গেছে; আগামীকালের দিনটিতে হয়ত আপনি না-ও পৌছতে পারেন; কিন্তু আজকের দিনটি আপনার জন্য সুতরাং যা করার আজই করে নিন। -[ইমাম আল-হাসান আল-বাসরী (রহ)]
৪০/ তাওহীদ হলো সমস্ত দোয়া, সমস্ত কান্নাকাটি, সাহায্য চেয়ে সমস্ত আবেদন, সমস্ত আশা এবং সকল কল্যাণের আগমন ও সকল ক্ষতি নিবারণের জন্য প্রার্থনা অন্য কেউ নয় বরং কেবলই আল্লাহর উদ্দেশ্যে হতে হবে। – [ইমাম মুহাম্মাদ আলী আশ-শাওকানী (আল দূর আল-নাদিদ)]
আল্লাহপাকের রহমত গুলো যদি আমরা অন্তর থেকে উপলব্ধি করতে পারি তাহলে দেখবেন যে এই পৃথিবীর বুকে প্রত্যেকটা মানুষ স্বার্থ নিয়ে চললেও আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের ভালোবাসেন বলে কোন ধরনের স্বার্থ ছাড়াই এগুলো করছেন। অর্থাৎ আপনি পাপের মধ্যে লিপ্ত থাকলেও বিভিন্ন রহমত আপনার জীবনে আসছে এবং আপনি যদি ভাল কাজ করে থাকেন এবং আল্লাহ পাকের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে থাকেন তাহলেও তিনি তার রহমতের বিষয়গুলো আমাদেরকে প্রদান করছেন।