কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা । কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা

আমাদের যদি কেউ উপকার করে তাহলে আমার সব সময় তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। আমাদের যদি কেউ একটা উপকার করে তাহলে তার বদলে আমরা তাদের দশটা উপকার করার মনোভাব রাখবো। আমাদের সাথে যদি ভালো হয় তাহলে আমরা অন্যর ভাল কামনা করব। কেউ যদি আমাদের উপকার করে তাহলে কৃতজ্ঞতা কিভাবে জানাতে হয় সেটা অনেকেই জানে না। অনেকেই অকৃতজ্ঞতার মত আচরণ করে। আপনার সাথে যদি কেউ ভালো ব্যবহার করে ওর অথবা আপনার

কোন বড় বিপদে যদি কেউ আপনাকে সাহায্য করে তাহলে আপনিও বদলে সেই ব্যক্তিকে সাহায্য করুন। আপনাকে যেমন বিপদ থেকে কেউ রক্ষা করেছে তেমনি আপনিও সেই ব্যক্তির বিপদে তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করুন তার পাশে দাঁড়ান। এভাবে একে অপরের সাহায্য করার মাধ্যমে কিন্তু আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি। এভাবে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোই হলো কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একমাত্র ভাষা।

কৃতজ্ঞতা হলো মানুষের উপকার মনে রাখা। কেউ যদি আমাদের কোন উপকার করে তাহলে আমরা সেটা মনে রাখবো এবং তার বদলে অন্যদের উপকার করার চেষ্টা করব। আমাদের সাথে যদি কেউ ভালো আচরণ করে এবং আমাদের উপকার করে তাহলে আমরাও সেই ব্যক্তির সঙ্গে ভালো আচরণ করব এবং সেই ব্যক্তির বিপদে সাহায্য করার চেষ্টা করব। উপকারীর উপকার স্বীকার করাই হলো কৃতজ্ঞতা।

যাদের মধ্যেই কৃতজ্ঞতা বোধ নেই তারা আসলে মানুষ নয়। যাদের মধ্যে কৃতজ্ঞতা বোধ নেই তারা কখনোই অন্যকে সাহায্য করে না। যাদের মধ্যে কৃতজ্ঞতা মত থাকে তারাই কিন্তু মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যায়।কৃতজ্ঞতাবোধ মানুষের একটি মহৎ গুণঃ আমরা জানি, কৃতজ্ঞ শব্দের অর্থ উপকারীর উপকার স্বীকার করা, অকৃতজ্ঞ শব্দের অর্থ উপকারীর উপকার অস্বীকার করা আর অকৃতজ্ঞ শব্দের অর্থ উপকারীর ক্ষতি করা। সমাজ ও পারিবারিক জীবনে এই তাৎপর্যময় শব্দ তিনটির আর্বতে আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি।

সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষের ভালোমন্দ, সত্য-মিথ্যা, তফাত করায় জ্ঞান থাকার পরও মানুষ অকারণে একে অন্যের প্রতি অকৃতজ্ঞ আচরণ করে, উপকারীর ক্ষতি করে। অথচ কৃতজ্ঞতাসুলভ সুন্দর আচরণের মাধ্যমে অতিসহজে একজন মানুষ অন্য একজন মানুষের প্রিয়ভাজন হতে পারে, আপন হতে পারে।

কেউ কেউ কৃতজ্ঞতাবোধকে ছোট হয়ে যাওয়া বা তোষামোদি মনে করে ভুল করে থাকে। কেউ সামান্যতম উপকার করলেও সে কথাটি স্মরণ রেখে উপকারকারীর অগোচরে সেটার প্রশংসা করলে স্বাভাবিকভাবে একে অন্যের দেখাদেখি অন্য লোকেরাও পরস্পরের উপকার ও ভালো কাজ করতে অনুপ্রাণিত হবে। অথচ জীবন চলার পথে মানুষ এ সামান্য সৌজন্য বোধটুকু দেখাতে, মৌখিক স্বীকৃতি টুকু দিতে কার্পণ্য বোধকরে, যা চরম হীনমন্যতারই বহিঃপ্রকাশ।

একজন নিঃস্বার্থ উপকারী লোক যখন উপকারভোগীর কাছ থেকে মৌখিক স্বীকৃতি সূচক ধন্যবাদ শব্দটিও পায় না, তখন স্বাভাবিকভাবে আহতবোধ করে। পক্ষান্তরে যদি উপকারভোগী স্বীকৃতির বিপরীতে উপকারকারীর ক্ষতি করার চেষ্টা করে, তখন তা বড়োই পীড়াদায়ক হয়, যার কারণে মানুষ ইচ্ছা ও সামর্থ্য থাকলেও আর কারো উপকার করার উৎসাহ দেখায় না। এতে একের আচরণে বহু লোকের ক্ষতি হয় এবং সামাজিক ও মানবিক দায়িত্ববোধ নষ্ট হয়ে যায়।

নির্বোধ পশু-পাখিরা পর্যন্ত তার প্রতিপালক বা মনিবের প্রতি যেখানে কৃতজ্ঞ, সেখানে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ কেন অকৃতজ্ঞ হয় তা বড় আশ্চর্যজনক বটে। একমাত্র অকৃতজ্ঞতার কারণে কতো পরিবার ভেঙে যাচ্ছে, কতো সমাজ, জাতি ও সভ্যতা ধ্বংস হয়েছে তার প্রমাণ ইতিহাসে আছে। আসুন সুন্দর সমাজজীবনের আশায় আমরা নিজেরা পরস্পর পরস্পরের প্রতি সুন্দর আচরণ করি। এতে পারিবারিক ও সামাজিক জীবন সুন্দর হওয়াসহ মানসিক শান্তি পাওয়া যাবে।

অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিরা কিন্তু সমাজে অশান্তি সৃষ্টির মূল। বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি এবং অপকর্ম মূলক কর্মকান্ড ঘটায় এই সকল অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিরা। আমাদের সকলের মনোভাব যদি উপকারীর উপকার করা হয় তাহলে সমাজে কিন্তু বিভিন্ন ধরনের সমস্যাগুলো চিরতরে বিলুপ্তি হয়ে যাবে।মনে রাখবেন, অকৃতজ্ঞতার আঘাত বা আচরণ মানুষ সহজে ভুলতে পারে না। আমার এক খৃষ্টান বন্ধুকে দেখেছি এক গ্লাস পানি পান করতে দিলেও ধন্যবাদ শব্দটি উচ্চারণ করতে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উপস্থিত প্রকাশ ধন্যবাদ। ভালো কাজকে ধন্যবাদ দিয়ে প্রশংসা করলে অন্যেরাও ভালো কাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক।

Leave a Comment