যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ইসলামের ভিত্তি হিসেবে পাঁচটি বিষয়ের কথা বলেছেন। সে পাঁচটি স্তম্ভ হচ্ছে কালেমা, সালাত, যাকাত, হজ্জ এবং রোজা। প্রত্যেকটি মুসলমান ব্যক্তির উপরে এই কাজগুলো করা আবশ্যক। যে সকল ব্যক্তির সামর্থ্য নেই তাদের জন্য যাকাত ফরজ করা হয়নি এবং হজ্জ ফরজ করা হয়নি। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের জন্যই কেবলমাত্র যাকাত এবং হজ্জ ফরজ করা হয়েছে। আমাদের আজকের আর্টিকেলটিতে যাকাত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অর্থাৎ যাকাতের পরিমাণ কত কত টাকা থাকলে বা কত সম্পদের মালিক হলে যাকাত আদায় করতে হবে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। তাই আপনি যদি যাকাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান, তাহলে এই আর্টিকেলটি পড়তে পারেন। এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনি যাকাত সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয় জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আসলে শুরু করা যাক।
যাকাত আদায়কে পবিত্র কুরআনে ‘মুমিন বান্দার সাফল্য’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, “অবশ্যই মুমিনরা সফল, যারা নামাজে বিনম্র থাকে, অনর্থক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকে, যারা যাকাত আদায় করে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান সংযত রাখে।” (সূরা মুমিনুন, আয়াত ১-৫)
তাই আমাদের মধ্যে যে সকল ব্যক্তির ওপর যাকাত ফরজ হয়েছে, আর যে সকল ব্যক্তি পূর্ণবয়স্ক এবং মুসলিম তাদের উপর যদি যাকাত ফরজ হয়ে থাকে তাদের যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের এক বছর অতিবাহিত হয়, তাহলে যাকাত আদায় করতে হবে। নিজের নিত্যদিনের প্রয়োজন পূরণ এবং নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বাদ দেওয়ার পর সাড়ে ৫২ তোলা পরিমাণ রুপা অথবা সাড়ে সাত তোলা পরিমাণ স্বর্ণ থাকা অথবা এর সমমূল্যের ব্যবসার মালিক হওয়া। যাকাত যে সকল বিষয়ের উপর প্রযোজ্য সেগুলো হলো স্বর্ণ ও রুপা। গবাদি পশু ও সব ধরনের বাণিজ্যিক পণ্য দেশী বিদেশী মুদ্রা ও ব্যবসায় পণ্যের সব নির্ধারণের সোনা রুপা হলো পরিমাপক। এক্ষেত্রে যাকাত প্রাপ্ত ব্যক্তির যেটি বেশি লাভজনক হবে সেটিকে পরিমাপক হিসেবে গ্রহণ করায় শরীয়তের নির্দেশ।
যাকাত আদায় করলে ধনীদের সম্পদ কমে না বরং যাকাত আদায় করলে তাদের সম্পদের পরিশুদ্ধতা লাভ করা যায় এবং তারা তাদের সম্পদের পবিত্রতা অর্জন করে। তাই যে সকল ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ হয়েছে তাদের অবশ্যই যাকাত আদায় করা উচিত। তাহলে আল্লাহ তায়ালা অনেক বেশি খুশি হবে। তাছাড়া যাকাত কখনো দরিদ্রদের উপর করুনা করা নয়, ধনীদের ওপর দরিদ্ররা যাকাত লাভ করতে পারবে। এটা তাদের অধিকার। তাই কোন ব্যক্তি যাকাত আদায় করছে মানে তার অহংকার করার কোনো জায়গা নেই। আবার কোনো ব্যক্তি যাকাত নিচ্ছে মানে তার মন খারাপেরও কোন জায়গা নেই। কারণ ইসলাম এমন একটি ধর্ম যেখানে প্রত্যেকটা মুসলমান যেন ভালো থাকে, মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষিত হয়, এজন্য সবকিছু বিধান করা হয়েছে। তাই যে ব্যক্তি যাকাত আদায় করবে তার যেমন যাকাত আদায় করা ফরজ তেমনিভাবে যে ব্যক্তি যাকাত গ্রহণ করবে সে ব্যক্তিরও যাকাত গ্রহণ করা এক ধরনের অধিকার।
চলতি মাসের অর্থাৎ মার্চ ২০২৪ শুরুতে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েট অনুযায়ী ৫২.৫ তোলা বাইট ক্যাডেট রুপার দাম হলো প্রায় ৭৫ হাজার টাকা। এ বছর যাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে ৭৫ হাজার টাকা প্রদানের আহ্বান জানানো হয়েছে। এজন্য কোনো ব্যক্তির যদি এই পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে তাকে ৭৫ হাজার টাকা অথবা নির্দিষ্ট পরিমাণে সোনা বা রুপা যাকাত হিসেবে দান করতে হবে।
তাই কোনো ব্যক্তি যদি যাকাত প্রদান করতে থাকে এবং তার নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী তাকে ৭৫ হাজার টাকা দান করতে হবে। অথবা তার নিসাব পরিমাণ সম্পদের ৪০ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে।