অভিকর্ষজ ত্বরণ কে g দ্বারা প্রকাশ করা হয়। ছাত্র জীবনে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ খুব প্রশ্ন হল কোথায় জি এর মান সবচেয়ে বেশি বা কম। কোন বস্তুকে উপর থেকে ছেড়ে দিলে অভিকর্ষ আকর্ষণের ফলে বস্তুটি মাটিতে পড়ে যায়। যেমন কাছ থেকে ফল পড়ে সেটা হাওয়াতে ভাসে না। মাটিতে পড়ে যায়। সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন হিসেবে এবং পদার্থবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পিক হল এই অভিকর্ষ ত্বরণ।
অনেকে এই অধ্যায়টি বুঝতে পারে না। তাই সহজ ভাষায় আমরা আজকে অভিকর্ষতারণ সম্পর্কে আলোচনা করব। অভিকর্ষ ত্বরণ অর্থাৎ জি এর মান কোথায় সবচেয়ে বেশি সেটা ভালো করে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়লে তোমাদের কাছে এই অধ্যায়ে কি একদম পানির মতো সোজা হয়ে যাবে।সহজ ভাষায় বোঝায় অভিকর্ষজ ত্বরণের সংজ্ঞা।
অভিকর্ষ বলের প্রভাবে ভূ-পৃষ্ঠে মুক্তভাবে পড়ন্ত কোন বস্তুর বেগ বৃদ্ধির হারকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বলে। অভিকর্ষজ ত্বরণের মান পৃথিবীর কেন্দ্র হতে বস্তুর দূরত্বের উপর নির্ভর করে। একে ‘g’ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এখানে, G= মহাকর্ষ ধ্রুবক, M= পৃথিবীর ভর এবং d= পৃথিবীর কেন্দ্র হতে বস্তুর দুরত্ব
যেহেতু অভিকর্ষজ ত্বরণ এক ধরনের ত্বরণ, সুতরাং এর মাত্রা হবে LT−2 এবং একক হবে ms−2।কী কী কারণে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান পরিবর্তন হয়? অভিকর্ষজ ত্বরণ ‘g’ কোনো ধ্রুব সংখ্যা নয়। স্থানভেদে এর পরিবর্তন হয়। নিম্নোক্ত তিনটি কারণে g এর পরিবর্তন হয়।
১. উচ্চতার ক্রিয়া,
২. অক্ষাংশ ক্রিয়া,
৩. পৃথিবীর ঘূর্ণন ক্রিয়া।
কোনো বস্তুর বেগ যদি নির্দিষ্ট দিকে সব সময় একই হারে বাড়তে থাকে তাহলে সেই ত্বরণকে সুষম বা সমত্বরণ বলে। আবার আমরা জানি, অভিকর্ষ বলের প্রভাবে মুক্তভাবে পড়ন্ত কোনো বস্তুর বেগ বৃদ্ধির হারকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বলে। এ সংজ্ঞা থেকে ‘সুস্পষ্ট যে, পড়ন্ত বস্তু নির্দিষ্ট দিক অর্থাৎ নিচের দিকে যখন পড়ে তখন বেগ সবসময় একই হারে বাড়তে থাকে। তাই, অভিকর্ষজ ত্বরণকে সমত্বরণ বলা যায়।
অভিকর্ষজ ত্বরণ ওপর থেকে পড়ন্ত বস্তুর বেগ বৃদ্ধির হার। অভিকর্ষের কারণে ওপর থেকে ছেড়ে দেয়া বস্তু ভূপৃষ্ঠের দিকে ধাবিত হয় এবং যতই ভূপৃষ্ঠের (তথা ভূ-কেন্দ্রের) নিকটবর্তী হয় এর পতনের বেগ বৃদ্ধি পেতে থাকে। পতনকালে প্রতি সেকেণ্ডে বেগ যতটুকু বৃদ্ধি লাভ করে তা-ই ‘অভিকর্ষজ ত্বরণ’ হিসেবে পদার্থ বিজ্ঞানে অভিহিত। অভিন্ন বস্তু তথা একই ভরের বস্তু পতনকালে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ত্বরণ পরিলক্ষিত হয়।
পৃথিবী ও অন্য যে কোন বস্তুর মধ্যে যে আকর্ষণ বল তাকে অভিকর্ষ বল বলা হয়। নিউটনের ২য় সূত্র অনুযায়ী বল প্রয়োগে বস্তুর ত্বরণ হয়। সুতরাং অভিকর্ষ বলের প্রভাবেও ত্বরণ হবে। সময়ের সাথে অভিকর্ষ বলের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর বেগ বৃদ্ধির হারকে অভিকর্ষজ ত্বর বলে। একে g দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
অভিকর্ষজ ত্বরণের সমীকরণ থেকে দেখা যায় যে, এর ডান পাশে বস্তুর ভর (m) অনুপস্থিত। সুতরাং, অভিকর্ষজ ত্বরণ বস্তুর ভরের উপর নির্ভরশীল নয়। যেহেতু, G এবং M ধ্রুবক, তাই, g এর মান পৃথিবীর কেন্দ্র হতে বস্তুর মধ্যবর্তী দুরত্বের উপর নির্ভর করে। সুতরাং, বলা যায়, অভিকর্ষজ ত্বরণের মান বস্তু নিরপেক্ষ হলেও স্থান নিরপেক্ষ নয়। ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে।
যেহেতু, পৃথিবী সম্পূর্ণ গোলাকার নয় অর্থাৎ পৃথিবীর ব্যাসার্ধ্য সব জায়গায় সমান নয় তাই ভূপৃষ্ঠে স্থানভেদে অভিকর্ষজ ত্বরণের মানের পরিবর্তন দেখা যায় এবং এটি পৃথিবীর ব্যাসার্ধ্যর বর্গের ব্যস্তানুপাতে পরিবর্তিত হয়। মেরু অঞ্চলে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ সবচেয়ে কম বলে সেখানে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান সবচেয়ে বেশি (৯.৮৩২১৭ ms−2) হয়। বিষুবীয় অঞ্চলে ব্যাসার্ধ্য অপেক্ষাকৃত বেশি বলে অভিকর্ষজ তরণের মান অপেক্ষাকৃত কম (৯.৭৮০৩৯ ms−2) হয়। ক্রান্তীয় অঞ্চলে এর মান ৯.৭৮৯১৮ ms−2।ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান বিভিন্ন বলে ৪৫° অক্ষাংশে সমুদ্র সমতলে এর মানকে আদর্শ মান ধরা হয় ।
আশা করি অভিকর্ষ তরণ g এর মান নির্ণয় সম্পর্কে তোমাদের যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছো। সহজ ভাষায় গাণিতিক সমস্যা গুলোর সমাধান পেতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করতে ভুলবেন না।