আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি গানটির রচয়িতা, গীতিকার ও সুরকার কে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে যারা এখানে ভিজিট করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে এখানে আমরা এই তথ্যগুলো উপস্থাপন করছি। তাছাড়া কোন প্রসঙ্গে অথবা কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই গানটি গাওয়া হয়েছে তা যদি আপনাদের সামনে আমরা জানিয়ে দিতে পারি তাহলে
অনেকের জন্যই খুব ভালো হবে। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই গানটি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে বলে অবশ্যই আমরা এই তথ্যগুলো সংগ্রহ করে রাখবো। কারণ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করার স্বার্থে অথবা নিজেদের জানার স্বার্থে আমরা যদি এগুলো জেনে নিতে পারি তাহলে আমাদের সাধারণ জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ হবে।
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি”- এই গানটি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনের জন্য গাওয়া হয়েছে। পৃথিবীর বুকে বাঙালিরা একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে পিছপা হননি। তাই আমাদের দেশের যে সকল ভাষা শহীদের রয়েছে তাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। ব্রিটিশ শাসন আমল থেকেই আমাদের যখন স্বাধীনতা হারিয়ে যায় তখন আমরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পতিত হই।
অর্থাৎ তারা আমাদের দেশের বিভিন্ন ধরনের শোষণ ও শাসন চালানোর জন্য একটা সময় তাদেরকে এদেশ থেকে বিতাড়িত করে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানে বিভক্ত করা হয়। ঠিক একই ভাবে পশ্চিম পাকিস্তানীরা আমাদের ওপর শোষণ ও শাসন চালিয়েছে দীর্ঘ কয়েক বছর। আর প্রথমেই আমাদেরকে যে বিষয়ে আঘাত করে সেটা হল আমাদের মাতৃভাষা সম্পর্কে। যদিও বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখের মাতৃভাষা ছিল বাংলা তারপরেও তারা উর্দুকে অফিশিয়াল ভাবে মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করার চেষ্টা করেছেন।
এমনকি তারা জানিয়েছে যে আমাদেরকে উর্দু ভাষায় কথা বলতে হবে এবং মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা ভুলে যেতে হবে। কিন্তু যে ভাষার মধ্য দিয়ে একজন বাঙালি সন্তান নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পেরেছে অথবা যে ভাষার মধ্য দিয়ে তিনি তার মাকে ডাকতে পেরেছেন সেই ভাষা কখনোই অন্য কেউ এসে সরিয়ে দিয়ে অন্য কোন ভাষা চাপিয়ে দেবে তা আমরা মেনে নেওয়ার মতো জাতি নই।তাই যখন এ বিষয়ে কথা উঠে তখন বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন চলতে থাকে এবং এই আন্দোলন আস্তে আস্তে এক ১৯৫২ সালে তুমুল আকার ধারণ করে।
আর সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একুশে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি ভঙ্গ করে ঢাকার রাজপথে রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই এই মিছিল বের করে। কিন্তু পাকিস্তান সরকারের অনুমতি থেকে হঠাৎ করে পাকিস্তানের সৈন্যরা বাঙালিদের ওপর গুলি বর্ষন করে এবং অনেকেই তাতে প্রাণ হারায়। আমরা বিভিন্ন দিবস আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালন করে থাকলেও বাংলা ভাষার জন্য অথবা মাতৃভাষার জন্য জীবন দেওয়ার ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বাঙালিরা প্রথম হওয়ার কারণে আমাদের মাতৃভাষা দিবস পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও পালন করা হয়ে থাকে।
তাই সকল দিক বিবেচনা করে ভাষা শহীদদের উদ্দেশ্যে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি এই গানটি গাওয়া হয়েছে। আর এই গানের যদি আপনারা রচয়িতা ও গীতিকার সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে চান তাহলে বলবো যে তৎকালীন সাংবাদিক ও লেখক আব্দুল গাফফার চৌধুরী উল্লেখিত ঘটনার দিনে এই গানটি রচনা করেন। প্রথমদিকে এই গানটি আব্দুল লতিফ এর কন্ঠে গাওয়া হয়ে থাকলেও পরবর্তীতে আলতাফ মাহমুদ এই গানটি গেয়ে থাকেন।
আব্দুল লতিফ এর চাইতে আলতাফ মাহমুদের সুরটি অধিক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং বর্তমান সময় পর্যন্ত সেই সুর চলমান রয়েছে। তাই ভাষা শহীদদের স্মরণ করার জন্য একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের ভাইদের রক্তে রাঙানো হয়েছে এবং সেই রক্ত আজীবন আমাদের জীবনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আশা করি উপরের আলোচনার ভিত্তিতে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে এবং আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি গানটি সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারলেন।