১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। তবে 1971 সালের 25 শে মার্চ কালো রাত্রিতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিরীহ বাঙালির ওপর নির্বিচারে গুলি করতে থাকে। বাঙালি নিজের আত্মরক্ষার জন্য এবং বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য অস্ত্র ধরে। বীর বাঙালি যে যেখানে যেভাবে ছিল সেখান থেকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল। বাংলাদেশ পাকিস্তান এর কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে।
তবে এর পূর্বের ইতিহাস হল ১৯৪৭ সালের ইংরেজরা এই ভারতীয় উপমহাদেশকে ভারত এবং পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রে বিভক্ত করে তারা স্বাধীনতা দিয়ে যায়। তবে এই দুটি রাষ্ট্র ছিল আসলে ধর্মের ভিত্তিতে মুসলিম ও দেশে এলাকাগুলো নিয়ে গঠিত হয়েছিল পাকিস্তান এবং হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা গুলি নিয়ে গড়ে উঠেছিল হিন্দুস্তান যা বর্তমানে ভারত বা ইন্ডিয়া নামে পরিচিত রয়েছে।
আর এই দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান নামের যে এক অদ্ভুত রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল তা একেবারেই অদ্ভুত বলে মনে হয়। এই পাকিস্তান এর দুইটি অংশ ছিল একটি পূর্ব পাকিস্তান অপরটি পশ্চিম পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান দেশ দুইটি একটাই রাষ্ট্র কিন্তু এই রাষ্ট্রটি ছিল একেবারেই অদ্ভুত রাষ্ট্র। এর দুইটি অঞ্চলের মধ্যে শুধুমাত্র ধর্মের মিল ছাড়া আর কোন মিল চোখে পড়েনি। তাই ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তান,
পাকিস্তানের দ্বারা অর্থাৎ পশ্চিম পাকিস্তানের দ্বারা নিপীড়িত হতে থাকে। আর এ কারণে ই ১৯৪৭ সালের স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৫২ সালেই এক বিরাট আন্দোলনের মুখে পড়ে পাকিস্তান সরকার। পাকিস্তান সরকার যখন পূর্ববাংলায় এসে অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানের এসে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু তখনই বাংলার সকল মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং তাদের প্রতিবাদ করে বলেছিল এটি কখনোই হতে পারে না।
পরবর্তীতে অবশ্য পাকিস্তানের উর্দু সাথে বাংলা কেউ রাষ্ট্রভাষা করা হয়েছিল। সেখান থেকেই শুরু পশ্চিম পাকিস্তান এরা বাংলাদেশের ওপর নানা ধরনের নিপীড়ন চালাতে থাকে এবং বাঙালি জনগণ এই নিপীড়ন কিছুতেই মেনে নেয় না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলন। স্বাধীনতার আন্দোলন আরো বেগবান হয় ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর।
১৯৭০ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও আওয়ামী লীগের হাতে পাকিস্তান ক্ষমতা ছেড়ে দেয়নি। তারপর থেকেই শুরু হয় আন্দোলন আরো বেগবান হওয়া। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দান বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বিরাট জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আক্ষরিক অর্থে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। সেই ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালীদের হাতে যার কাছে যা আছে তাই দিয়ে যুদ্ধ করার কথা বলেছিলেন। তিনি ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে বলেছিলেন।
আরো বলেছিলেন যে এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তারপর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানীরা বাংলাদেশের উপর নানা ধরনের নিপীড়ন চালাতে থাকে এবং ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ কাল রাতে এসে অতর্কিত হামলা চালায়। তারপর থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় এবং সেই মুক্তিযুদ্ধে এক লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে গান রচনা করেন।
বাংলাদেশের এই কাল দুই গানটি রচনা করেন গোবিন্দ হালদার। এই গানটির সুর দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী আপেল মাহমুদ এবং মূল কণ্ঠ দিয়েছিলেন স্বপ্না রায়। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে গোবিন্দ হালদার অনেক ধরনের গান রচনা করেন এবং সেই গানগুলি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয় যাতে করে মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদেরকে মনোবল অটুট রাখতে পারে। গোবিন্দ হালদার ও সেই দিক থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে বিভিন্ন ধরনের গান লিখে গেছেন সেই সময়।
এবং গানগুলোও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। এই গানটি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার প্রাক্কালে অর্থাৎ যখন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন সেই সন্ধ্যায় বেজে উঠেছিল এই কালজয়ী গানটি। তাহলে আপনারা দেখছেন যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার এবং তার পরবর্তী ব্যাপক জনপ্রিয় পাওয়া এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা আমরা তোমাদের ভুলবো না। এই কালজয়ী গানটির গীতিকার হলেন গোবিন্দ হালদার।